হামাসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের এজেন্ট নয় – ট্রাম্পের দূত
যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের গোপন বৈঠকের খবরে ক্ষোভে ফুঁসছে ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জিম্মি-বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহেলার কাতারের দোহায় রোববার (৯ মার্চ) হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেন। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরাইলকে বাদ দিয়েই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, যা তেল আবিবের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
১৯৯৭ সালে হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ইসরাইলের সুরেই কথা বলে এসেছে। কিন্তু এবার সেই ওয়াশিংটনই হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসায় বিস্মিত হয়েছে তেল আবিব। বৈঠকের পর মার্কিন দূত বোহেলার জানান, এক বন্দির মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সব বন্দিকে মুক্ত করা সম্ভব হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, এই আলোচনা স্বস্তিকর ছিল না, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এখনো হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেই দেখে।
তবে সবচেয়ে বড় চমক আসে যখন বোহেলার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের এজেন্ট হয়ে কাজ করছে না, ওয়াশিংটনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।’ এই বক্তব্যে হতবাক হয়েছে ইসরাইল। মার্কিন প্রশাসনের এমন অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ভারসাম্যে নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র-হামাস আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে, যদিও ওয়াশিংটন বা হামাস—কোনো পক্ষই এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানায়নি।
এদিকে, হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু হতেই গাজার ওপর নতুন চাপ প্রয়োগ করেছে ইসরাইল। আলোচনা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গাজার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় তেল আবিব। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরাইলের এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ দূত ফ্রান্সেসা আলবানিজ জানিয়েছেন, ‘গাজায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া।’ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরাইলের এই সিদ্ধান্ত ইচ্ছাকৃত এবং এটি গণহত্যার শামিল।
গাজায় পানি সরবরাহও সীমিত করে দিয়েছে ইসরাইল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ইসরাইল ইতোমধ্যেই গাজার ফিলিস্তিনিদের পানি প্রবেশের প্রধান পথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি উল্লেখ করে, গাজার বাসিন্দারা প্রতিদিন মাত্র ২ থেকে ৯ লিটার পানি পাচ্ছেন, যা জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫ লিটারের অর্ধেকও নয়।
অন্যদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিকে খুব বেশি সামনে আনতে চাচ্ছে না। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দূতের বক্তব্য ইসরাইলের কানে যেমন লেগেছে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্নও তুলেছে।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এগিয়ে নিতে ইসরাইল ইতোমধ্যেই কাতারে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ ১১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফও কাতার সফরে যাবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ইসরাইলের কৌশল এখন পরিষ্কার—আলোচনার চাপের মধ্যে হামাসকে দুর্বল করতে গাজায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ বন্ধ রাখা। গত সপ্তাহে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির জন্য খাবার ও ওষুধ পাঠানো বন্ধ করেছে তেল আবিব। হামাস এটিকে ইসরাইলের ‘অনাহার নীতি’ বলে অভিহিত করেছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-হামাস আলোচনা, ইসরাইলের ক্ষোভ এবং গাজায় নতুন মানবিক সংকট—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশল কীভাবে মোকাবিলা করে এবং হামাসের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কি আসলে গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে, নাকি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে অঞ্চলটি।