রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ৮:৪১

হাজারো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী মহাস্থানগড়: রহস্যে মোড়ানো এক প্রাচীন নগরী

প্রতিবেদক
staffreporter
জানুয়ারি ৪, ২০২৫ ১১:০২ পূর্বাহ্ণ
হাজারো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী মহাস্থানগড়: রহস্যে মোড়ানো এক প্রাচীন নগরী

হাজারো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী মহাস্থানগড়: রহস্যে মোড়ানো এক প্রাচীন নগরী

বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত মহাস্থানগড়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন নগরী হিসেবে পরিচিত। প্রাচীনকালে পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত এই স্থানটি ছিল এক সমৃদ্ধ সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। মহাস্থানগড় শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়; এটি বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর ধ্বংসাবশেষে লুকিয়ে আছে এমন এক রহস্যময় ইতিহাস, যা প্রতিটি পর্যটককেই মুগ্ধ করে তোলে।

মহাস্থানগড়ের ইতিহাস শুরু হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে, যখন এই অঞ্চলটি মোরিয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে গুপ্ত, পাল, সেন এবং মোগল শাসকদের অধীনে এই নগরী সমৃদ্ধি লাভ করে। এখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো থেকে জানা যায়, এটি ছিল একটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র। এই স্থানে পাওয়া গেছে ব্রাহ্মী লিপি, যা বাংলার প্রাচীনতম লিখিত ভাষার নিদর্শন। এই লিপিগুলোতে ধর্মীয় এবং সামাজিক জীবনের বিবরণ পাওয়া যায়, যা প্রাচীন বাংলার জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরে।

মহাস্থানগড়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো এর বিশাল প্রাচীর, যা নগরীর সীমানা নির্ধারণ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে বিভিন্ন প্রাসাদ, মন্দির, পানির ট্যাংক এবং অন্যান্য স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। স্থানটির কেন্দ্রে অবস্থিত গোকুল মেধ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যা মাটির তৈরি একটি স্তূপ। অনেকেই মনে করেন, এটি মহাভারতের কাহিনী অনুসারে জড়িত।

তবে, মহাস্থানগড়ের সবচেয়ে রহস্যময় অংশ হলো এর নিচে লুকিয়ে থাকা সুড়ঙ্গ পথ। অনেক গবেষক মনে করেন, এই সুড়ঙ্গগুলো একসময় রাজাদের গোপন যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে এখনো সেগুলোর পুরোপুরি সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই সুড়ঙ্গগুলো নিয়ে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে, যা স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বর্তমানে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা ও পর্যটনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন, যারা বাংলার ইতিহাসের এই জীবন্ত সাক্ষীকে কাছ থেকে দেখতে চান। স্থানটি বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আজও সকলের জন্য একটি শিক্ষণীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

মহাস্থানগড় কেবল একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়; এটি বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর প্রতিটি ইট, প্রতিটি ধ্বংসাবশেষ এক জীবন্ত অধ্যায়, যা আমাদের অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এই প্রাচীন নগরী বাংলার গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আমাদের শিকড়ের সন্ধানে নিয়ে যায়।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ