বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে, অথচ ব্যয় বাড়ছে—এতে জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশের মতো দেশে স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ বরাদ্দ থাকা উচিত। তবে বাস্তবে, এই খাতে বরাদ্দ প্রায় এক শতাংশের কাছাকাছি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সিংহভাগই ব্যয় হয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য, যা সেবার মান উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের শাখা ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের সর্বশেষ প্রকাশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদেরকে বহন করতে হয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের উপরে আছে শুধুমাত্র আফগানিস্তান—দেশটির নাগরিকদের ৭৮ শতাংশ ব্যয় নিজেদের বহন করতে হয়। এতে করে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্বাস্থ্যসেবার জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের আর্থিক অবস্থা আরও সংকটাপন্ন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতির অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, 'ব্যক্তি পর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত কোনো জায়গাতেই স্বাস্থ্যখাত আমাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। সরকারও এদিকে যথাযথ মনোযোগ দেয় না। এ কারণে এই খাতে মানুষের ব্যয় বাড়ে।' তিনি আরও বলেন, 'স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলার কারণেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং হাসপাতালে রোগীদের চাপ বাড়ছে।'
সরকারি হাসপাতালগুলো এত বেশি রোগীকে সেবা দিতে পারে না। যার কারণে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালেও তারা প্রত্যাশিত সেবা পায় না। অধ্যাপক হামিদ বলেন, 'এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি অস্বাস্থ্যকর জাতিতে পরিণত হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবার জন্য অতিরিক্ত খরচ পরিবারের ওপর বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং তাদের সবকিছুর ওপরই এর প্রভাব পড়ছে। তারা আরও দেখতে পান যে, দরিদ্র পরিবারগুলো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা এড়ানো বা দেরিতে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার কারণে তাদের ব্যয় বাড়ছে অসহনীয় পর্যায়ে। স্বল্প আয়ের মানুষ কম খরচের জন্য এমন সব জায়গা থেকে চিকিৎসা সেবা নেয় যা তাদের পরবর্তীতে স্বাস্থ্য খাতে খরচ আরও বাড়িয়ে দেয়।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কম, ব্যয় বাড়ছে এবং সেবার মান দুর্বল—এতে করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ভোগান্তি বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, সেবার মান উন্নয়ন এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এতে করে স্বাস্থ্য খাতে জনগণের ভোগান্তি কমবে এবং সবার জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।