স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘অস্বাভাবিক’ বদলি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গত মাসে চিকিৎসকদের অস্বাভাবিক বদলির ঘটনা ঘটেছে। ২৩ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ মাস ১০ দিনে ২ হাজারের বেশি চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী মাসের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। এই ব্যাপক বদলি চিকিৎসকদের মধ্যে মেডিকেল অফিসার থেকে শুরু করে পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন।
এটি শুরু হয় নতুন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর ও নতুন পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফের যোগ দেওয়ার পর। তাঁদের যোগদান থেকে বদলির গতি দ্রুত হয়, কারণ ২০২৩ সালের অক্টোবর ও আগস্টে তারা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগের সময়গুলোতে যেখানে এক মাসে ১০০ বদলি হত, সেখানে এই এক মাসে ২ হাজারের বেশি বদলি হয়েছে।
বদলির পরিমাণ এতটা বাড়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ হলো আগের সরকারের সমর্থক চিকিৎসকদের শাস্তিমূলক বদলি, দ্বিতীয়ত বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে আসা এবং তৃতীয়ত, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দেওয়া। অনেকেই মনে করছেন, এই বদলি প্রকৃতপক্ষে নিয়োগ বাণিজ্যের অংশ, যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে।
এছাড়া, এই বদলিতে প্রতি চিকিৎসককে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তথ্য অনুযায়ী, মোট ২ হাজার বদলির মধ্যে প্রায় অর্ধেক বদলি হয়েছে টাকা দিয়ে, যার ফলে মোট ৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। বদলি সংক্রান্ত এই লেনদেনের মধ্যে একজনকে বদলি করার জন্য ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, এর মধ্যে ৬০০ স্বাচিপ (স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ) সমর্থক, ৪০০ ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সমর্থক এবং ১০০ এনডিএফ সমর্থিত চিকিৎসকদের বদলি করা হয়েছে। এই বদলির বেশিরভাগই রাজনৈতিক সুবিধাভোগীদের জন্য করা হয়েছে।
বদলি হওয়া চিকিৎসকদের জন্য প্রত্যেকের ট্রান্সফার বিল হিসেবে টিএ-ডিএ বাবদ গড়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, যার ফলে সরকারের প্রায় ৪ কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। অধিকাংশ বদলি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে হওয়ায় এই পুরো পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের মধ্যে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, “বদলিজট লেগে ছিল। এখন পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে বঞ্চিতদের আনা হচ্ছে এবং স্বৈরাচারের অনুসারীদের সরানো হচ্ছে।” তবে তিনি স্বীকার করেছেন, বদলির সঙ্গে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এবং সেই বিষয়ে প্রমাণ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ জানান, বদলির সঙ্গে ড্যাবের তেমন সম্পৃক্ততা নেই, যদিও টাকার লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেননি তিনি। তিনি আরও বলেন, বদলির নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
এই ব্যাপক বদলির পেছনে চারটি ফাইলের নিয়ন্ত্রণকারী চারজনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে, যারা প্রশাসনিকভাবে বদলি পরিচালনা করেন। অভিযোগ উঠেছে, এই ফাইলগুলোর মাধ্যমে অস্বাভাবিক বদলি করা হয়, এবং এতে টাকা নেওয়া হয়।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেন, বদলির এই সংস্কৃতি স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং অবিলম্বে নিয়োগ এবং বদলির সঠিক নীতিমালা নির্ধারণের প্রয়োজন।