স্থিতিশীল বাজারে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি
সম্প্রতি স্থিতিশীল বাজারে হঠাৎ করেই ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা বেশি দামে কিনতে শুরু করায় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম ছিল ১১৯ টাকা, যা বেড়ে বর্তমানে ১২২-১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। কয়েকটি ব্যাংক এই ডলার ১২৩-১২৪ টাকায় বিক্রি করছে।
মূল কারণ: আমদানি দায় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমদানি দায় পরিশোধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ১২ নভেম্বরের সার্কুলারে নির্দেশ দেওয়া হয় যে আমদানি দায় কোনোভাবেই বকেয়া রাখা যাবে না। এই নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো আমদানির পুরোনো দায় মেটানোর জন্য বাড়তি ডলার সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে ডলারের সরবরাহ কম থাকায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বাজারে ডলার বিক্রির হারও সীমিত। ফলে রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য বেড়ে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রবাসীরা সর্বোচ্চ ১২৬ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন।
বাজারভিত্তিক পদ্ধতির সুপারিশ
ডলারের মূল্য ক্রলিং পেগ পদ্ধতি থেকে বাজারভিত্তিক পদ্ধতিতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছে। আইএমএফও এই পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে ডলারের মূল্য আরও বাড়তে পারে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন।
আমদানির ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি
এলসি নিষ্পত্তির ডলারের রেট ১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। রেমিট্যান্সের রেট বেড়ে যাওয়ায় আমদানির খরচ বাড়ছে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাধা হতে পারে। বিশেষ করে রমজানের পণ্য আমদানির সময় ডলারের মূল্যস্ফীতির প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে বলে ব্যাংকাররা সতর্ক করেছেন।
ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও সংকট অব্যাহত
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৬.৪৪ শতাংশ বেড়ে ১১.১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে এই প্রবাহও আমদানির বাড়তি চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।
সংকট ও ভবিষ্যতের আশঙ্কা
ডলারের মূল্যবৃদ্ধি খোলা বাজারেও প্রভাব ফেলছে। চিকিৎসাসহ জরুরি কাজের জন্য ভারত ভ্রমণে ভিসা পাওয়ার সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। বাজারে ডলারের এই অস্থিরতা সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।