স্টোনহেঞ্জ: প্রাগৈতিহাসিক রহস্যময় সৌধের গল্প
স্টোনহেঞ্জ (Stonehenge) পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যার নির্মাণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজও গবেষকরা রহস্যের জালে আবদ্ধ। এটি ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারে অবস্থিত এবং খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ৩০০০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। বিশালাকৃতির পাথরচক্রের এই স্থাপনাটি কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হয়েছিল, তা নিয়ে বহু তত্ত্ব ও কল্পনা রয়েছে।
স্টোনহেঞ্জের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিশালাকৃতির সার্সেন (Sarsen) পাথর, যা প্রায় ২৫ টন ওজনের এবং ১৩ ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে। এগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে দাঁড় করানো হয়েছে, কিছু পাথর আবার অনুভূমিকভাবে অন্যগুলোর ওপর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও ব্লুস্টোন (Bluestone) নামক অপেক্ষাকৃত ছোট পাথরও এখানে পাওয়া গেছে, যা গবেষকদের মতে ২০০ মাইল দূরের ওয়েলস থেকে আনা হয়েছিল— কিন্তু কীভাবে, তা আজও অজানা।
এই স্থাপনাটি যে শুধুমাত্র একটি প্রস্তর সৌধ নয়, বরং জ্যোতির্বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি কাঠামো, সে ধারণা গবেষকরা অনেক দিন ধরেই দিয়ে আসছেন। স্টোনহেঞ্জ এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, গ্রীষ্ম ও শীতের অয়ন অবস্থানের সময় সূর্যের আলো ঠিক নির্দিষ্ট কিছু পাথরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, এটি ছিল একটি সৌর ক্যালেন্ডার বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল, যেখানে আদিম মানব সভ্যতা সূর্যপূজা করত।
এছাড়া, এখানে পাওয়া কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও হাড়গোড় থেকে বোঝা যায় যে, এটি সম্ভবত কোনো সমাধিস্থলও ছিল। কিছু গবেষক মনে করেন, স্টোনহেঞ্জ ছিল আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক মিলনস্থল, যেখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত।
স্টোনহেঞ্জের নির্মাণপ্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। এত বিশাল পাথর কীভাবে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল, তা আজও রহস্য। অনেকে মনে করেন, হাজার হাজার শ্রমিক কাঠের রোলার, দড়ি ও নৌকার সাহায্যে এগুলো সরিয়েছিল, আবার কেউ কেউ দাবি করেন, এটি ভিনগ্রহের প্রাণীদের (Aliens) সহায়তায় তৈরি হয়েছিল!
আজকের দিনে স্টোনহেঞ্জ একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক এখানে আসে, বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও শীতের অয়ন অবস্থানে, যখন সূর্যের আলো স্টোনহেঞ্জের মধ্য দিয়ে এক জাদুকরী দৃশ্য তৈরি করে।
এখনও পর্যন্ত স্টোনহেঞ্জের আসল রহস্য উন্মোচিত হয়নি, তবে এটি যে মানব সভ্যতার এক অসাধারণ কীর্তি, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটি একদিকে যেমন প্রাচীন মানুষের বুদ্ধিমত্তার সাক্ষ্য বহন করে, তেমনি আধুনিক মানুষের কৌতূহলেরও কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।