সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বর্তমানে জটিলতা তৈরি হয়েছে, যার ফলে কর্মী পাঠানোর হার কমে গেছে। ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণার পর দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়ে গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে ফেব্রুয়ারিতে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের এই সংকট দূর করতে আজ মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সদস্যরা। বৈঠক শেষে তারা জানান, আগামীকাল সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। তবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কেউ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।
বায়রার নেতারা জানান, সৌদি আরব থেকে আসা কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র দূতাবাসের মাধ্যমে সত্যায়ন করতে হয়। আগে ২৪ জন পর্যন্ত নিয়োগপত্রের সত্যায়নের প্রয়োজন ছিল না, তবে গত ২২ ডিসেম্বর নতুন নিয়ম চালু হওয়ায় এখন প্রত্যেকটি নিয়োগপত্র সত্যায়ন করাতে হচ্ছে। এতে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ায় কর্মী পাঠানোর হার কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা আগের নিয়ম ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
বায়রার নেতা খন্দকার আবু আশফাক বলেন, প্রত্যেকটি নিয়োগপত্র আলাদাভাবে সত্যায়ন করাতে গেলে দীর্ঘ সময় লাগে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, দূতাবাসের সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় হঠাৎ নিয়ম পরিবর্তন করায় শ্রমবাজারে সংকট দেখা দিয়েছে।
বায়রা জানায়, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ৮৫ শতাংশ কর্মী ১ থেকে ২৪টি চাহিদাপত্রের মাধ্যমে যান। ফলে দূতাবাসের সত্যায়ন জটিলতার কারণে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট তৈরির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বায়রা সদস্যরা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন এবং একটি স্মারকলিপি জমা দেন। তারা অভিযোগ করেন, মালয়েশিয়ায় একটি সিন্ডিকেট প্রতিটি কর্মীর কাছ থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবে ৪৪ হাজার ২২৯ জন কর্মী পাঠানো হয়। পরের তিন মাসে এই সংখ্যা বেড়ে ৮০ হাজারের বেশি হয়। তবে জানুয়ারিতে তা কমে ৭৬ হাজার ৬১৮ জনে দাঁড়ায়, আর ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে ৪৪ হাজার ২৫৮ জনে নেমে আসে। নতুন সত্যায়ন প্রক্রিয়ার কারণে এই সংকট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।