সুন্দরবন—বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যেখানে প্রকৃতি নিজের মহিমায় বিরাজ করছে। এই গভীর সবুজের রাজত্বে এক ভয়ঙ্কর, অথচ অতুলনীয় সুন্দর শিকারির বসবাস—বাঘ। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার শুধু বাংলাদেশের গর্ব নয়, এটি বনের রাজা হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গার বাঘের তুলনায় সুন্দরবনের বাঘেরা বেশ রহস্যময় এবং কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত।
এই বনের বাঘেরা মূলত একাকী জীবনযাপন করে এবং সাধারণত রাতে শিকার করতে পছন্দ করে। এরা অত্যন্ত দক্ষ শিকারি এবং এদের প্রধান খাবারের মধ্যে হরিণ, বুনো শূকর ও মাঝেমধ্যে মাছও থাকে। সুন্দরবনের জোয়ার-ভাটার জলে অভিযোজিত হয়ে এরা সাঁতার কাটতেও অত্যন্ত দক্ষ, যা অন্যান্য বাঘের তুলনায় আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
সুন্দরবনের বাঘেরা বিশেষভাবে রহস্যময়, কারণ অন্যান্য অঞ্চলের বাঘের মতো সহজে দেখা যায় না। বনটির জটিল ভূগোল, নদী-খালবেষ্টিত অঞ্চল এবং ঘন গাছপালার কারণে এই বাঘেরা সাধারণত লুকিয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চলের বাঘেরা তুলনামূলক বেশি হিংস্র হতে পারে, কারণ খাদ্যসংকট এবং প্রতিকূল পরিবেশ তাদের আগ্রাসী করে তুলেছে।
কিন্তু এই মহিমান্বিত প্রাণী আজ বিপন্ন। অবৈধ শিকার, বন উজাড়, জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্যের অভাবের কারণে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার বাঘ রক্ষার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে টহল জোরদার, বন সংরক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
সুন্দরবনের বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়, এটি এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের প্রতীক, প্রকৃতির ভারসাম্যের রক্ষক। যদি আমরা এই মহামূল্যবান সম্পদকে সংরক্ষণ করতে পারি, তবে সুন্দরবনের এই রহস্যময় রাজার অস্তিত্বও টিকে থাকবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য।