সুন্দরবন, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। এই বন শুধু একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গর্ব। তবে, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড় এবং মানুষের অনুপ্রবেশের কারণে সুন্দরবনের বাঘ আজ বিপন্ন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন একটি বিশেষ দল, যারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে এই বিরল প্রাণীটির রক্ষায় নিবেদিত।
বাঘরক্ষী দলগুলোর কাজ শুরু হয় ভোরবেলায়। তারা নৌকায় চড়ে সুন্দরবনের গভীরে যান, যেখানে বনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাঘের গতিবিধি নজরদারি করা হয়। এই দলের সদস্যরা বনের প্রতিটি কোণ তল্লাশি করেন, বাঘের চলাচল নির্ণয় করেন এবং বেআইনি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এ কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ বাঘের মতোই তারা প্রতিনিয়ত বিষাক্ত সাপ, কুমির এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মুখোমুখি হন।
একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে একটি দল সুন্দরবনের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেআইনি শিকারের ফাঁদ আবিষ্কার করে। ফাঁদটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যা একটি বাঘকে গুরুতর আহত করতে সক্ষম। কিন্তু দলের সদস্যরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সেই ফাঁদটি ধ্বংস করেন এবং এলাকাটি সুরক্ষিত করেন। এ ধরনের অভিযান চালানোর সময় তাদের সাহস এবং দক্ষতা অবর্ণনীয়।
এছাড়া, বাঘরক্ষীদের একটি বড় অংশ কাজ করে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে। তারা মানুষকে বোঝান যে বাঘ শুধু একটি প্রাণী নয়, বরং এটি সুন্দরবনের একটি অপরিহার্য অংশ। বাঘের সংখ্যা কমে গেলে পুরো ইকোসিস্টেম হুমকির মুখে পড়বে। স্থানীয়দের সঙ্গে এই সংলাপগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা বন ও বাঘকে রক্ষার জন্য মূল ভূমিকা পালন করতে পারে।
তবে, বাঘরক্ষীদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পর্যাপ্ত সম্পদের অভাব। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন বা ইনফ্রারেড ক্যামেরা প্রয়োজন, যা দিয়ে বাঘের গতিবিধি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু অর্থের অভাবে এইসব সরঞ্জাম প্রায়ই অপ্রতুল থাকে। তা সত্ত্বেও, তাদের আত্মত্যাগ এবং নিষ্ঠা এই কাজকে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাঘরক্ষীদের এই অবিচল সংগ্রাম শুধু একটি প্রাণীকে রক্ষা করার জন্য নয়, বরং এটি একটি জীবনযাত্রাকে রক্ষার লড়াই। তাদের কাজ নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এই প্রচেষ্টা যদি অব্যাহত থাকে, তবে সুন্দরবন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার দুটোই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বেঁচে থাকবে।