রবিবার, ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫| রাত ৮:৩৩

সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধ ও অবশেষে স্বৈরশাসক বাশার আসাদ এর পতন

প্রতিবেদক
staffreporter
ডিসেম্বর ৯, ২০২৪ ২:৫০ অপরাহ্ণ

সিরিয়ায় এক দশকের গৃহযুদ্ধ ও অবশেষে স্বৈরশাসক বাশার আসাদ এর পতন।

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দুই দশকের নির্মম শাসনের সমাপ্তি ঘটেছে। মাত্র ১২ দিনের বিদ্রোহের মুখে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে এবং তাদের নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

এর মধ্যেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ৭৫টি বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সেন্টকম কমান্ডার মাইকেল কুরিলা জানিয়েছেন, এসব হামলা আই এস আই এলের পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করার উদ্দেশ্যে চালানো হয়েছে। সিরিয়ায় ৯০০ মার্কিন সেনা বর্তমানে অবস্থান করছে, যারা সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে বাদিয়াহ মরুভূমিতে আই এস-এর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া লক্ষ্যবস্তু করেছে।

বাশার শাসনের অন্ধকার যুগ:
নির্মম গণহত্যার দলিলঃ

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে তার পিতা হাফিজ আল-আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন। প্রথম দিকে তিনি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও শীঘ্রই বাবার মতো কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসকে রূপ নেন। তার শাসনামলে সিরিয়া রূপ নেয় এক ভয়াবহ দমন-পীড়নের রাষ্ট্রে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউয়ে যখন সিরিয়ার মানুষ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য রাস্তায় নামল, তখন আসাদ বাহিনী তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। গণহারে গ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মতো ভয়াবহ অপরাধের মাধ্যমে বাশার তার শাসন শক্ত করতে চেয়েছিলেন। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা একাধিকবার তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলেছে।

সিরিয়ার ২০ বছরের বিভীষিকাঃ

১. গণহত্যা ও রাসায়নিক হামলাঃ

২০১৩ সালে গৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানো হয়, যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটিকে আধুনিক যুগের অন্যতম নৃশংসতম অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।

২. মানবাধিকার লঙ্ঘনঃ

বিরোধীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার ও হত্যা ছিল আসাদ সরকারের নিত্য ঘটনা। নির্যাতনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, কারাগারে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিত।

৩. জাতিগত নিধনঃ

আসাদের শাসনে কুর্দি, সুন্নি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হয়েছে। তাদের গ্রামগুলিতে গণহারে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

৪. গৃহযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞঃ

২০১১ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে প্রায় পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। শরণার্থী হিসেবে দেশ ছেড়েছে ৭০ লাখের বেশি। সিরিয়ার শহরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন ও পতনের কারণঃ

আসাদের দীর্ঘ শাসনকাল টিকে ছিল মূলত রাশিয়া ও ইরানের শক্তিশালী সমর্থনের কারণে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই দুই মিত্রই সিরিয়ায় তাদের সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম মাত্র তিনটি শহর দখল করার পরই বাশার আল-আসাদ গোপনে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় নতুন বার্তাঃ

মার্কিন প্রশাসন একথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আইএস-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠী বা তাদের মদদদাতা যে-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের এই বিজয় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

বিশ্ব বিবেকের প্রশ্নঃ

বাশার আল-আসাদের এই নির্মম শাসনের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতদিন কেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিরিয়ার মানুষের ওপর ২০ বছর ধরে চলা নির্যাতন-নিপীড়নের যে নির্মম কাহিনি, তা বিশ্ব বিবেকের কাছে এক গভীর দায়বদ্ধতার বিষয়।

সিরিয়ার জনগণ এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায়। কিন্তু বাশার শাসনের অমানবিক ইতিহাস তাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বাধীনতা সবসময় রক্তের দামে কেনা।

শরীফ আব্দুল্লাহ মাসউদ
প্রধান সম্পাদক।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ

আপনার জন্য নির্বাচিত