পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এখনো চাকরিতে বহাল আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক *আরিফুল ইসলাম ওরফে ইমরান হাসান আরিফ। তিনি ভাঙ্গুড়া পৌরসভার *প্রধান সহকারী পদে কর্মরত।
আরিফুল ইসলামের রাজনৈতিক পরিচিতি বেশ দীর্ঘ—তিনি শুধু আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা নন, অতীতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন, তবুও নিয়মিত চাকরিতে বহাল রয়েছেন!
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সরকার পতনের দিন—৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর, নিজ এলাকা থেকেও পালিয়ে যান আরিফ। পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট পৌর মেয়র আজাদ খানের কাছ থেকে গোপনে এক মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন তিনি। সেই ছুটি শেষে ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি হঠাৎ পৌরসভায় হাজির হয়ে আরও তিন মাসের ছুটির আবেদন করেন, যা পৌর প্রশাসক তাসমিয়া আক্তার রোজী মঞ্জুর করেন। এরপর তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—একজন কর্মচারী যখন নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তখন এত সহজেই কীভাবে ছুটি মঞ্জুর হয়?
চাকরির নিয়ম অনুযায়ী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলে সরকারি চাকরিজীবীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ পলাতক অবস্থায়ও আরিফের চাকরি অটুট!
এ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। তারা বলছেন—এটি শুধুই রাজনৈতিক প্রভাবের ফল।
স্থানীয়দের দাবি, হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও রাজনৈতিক যোগাযোগের জোরে আরিফুল ইসলাম অল্প সময়ে গড়ে তুলেছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদ। চাঁদাবাজি, ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, এবং নানা অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন এক বিলাসবহুল জীবন।
২০১২ সালে ভাঙ্গুড়া পৌরসভায় ভাণ্ডার রক্ষক হিসেবে চাকরি শুরু করেছিলেন তিনি। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন প্রধান সহকারী। কিন্তু চাকরি নামমাত্র; বাস্তবে তিনি ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের হোতা।
পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আরিফ প্রভাবশালী এমপি মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অফিসে তেমন আসতেনই না। মাস শেষে হাজিরা খাতায় সই করে বেতন নিয়ে যেতেন।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিয়া আক্তার রোজী জানান, আরিফের চিকিৎসা ছুটি শেষ হওয়ার পর তাকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি আর অফিসে ফেরেননি।
এরপর তিনি বিনা বেতনে ছুটির আবেদন করেন মেইলের মাধ্যমে, কিন্তু এবার *আর ছুটি অনুমোদন করা হয়নি। বর্তমানে তার *বেতন-ভাতা বন্ধ* রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি *স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রভাষক সরদার জাফর ইকবাল হিরোক বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি পলাতক। শুনেছি, গোপনে এসে ছুটি নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এতদিন কর্মস্থলে না থেকেও কিভাবে তিনি এখনও চাকরিতে বহাল থাকেন—এটা আমাদের সকলের জন্যই বিস্ময়কর।”
আরিফুল ইসলাম বর্তমানে পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একজন সরকারি কর্মচারী, যিনি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান, তিনি দীর্ঘ সাত মাস ধরে অফিস না করেও চাকরি ধরে রেখেছেন—এটা শুধু প্রশাসনিক নয়, নৈতিক প্রশ্নও তোলে। স্থানীয়রা চাইছেন, দ্রুত প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।