ডিজিটাল জীবনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে অফিসের কাজ থেকে শুরু করে কেনাকাটা, ব্যাংকিং, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ পর্যন্ত—সবই অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালেই লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকর হুমকি, যার নাম সাইবার হামলা। প্রতিদিন বিশ্বের বহু মানুষ নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন—ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক, ফিশিং স্ক্যাম, ব্ল্যাকমেইল ইত্যাদি এখন নতুন আতঙ্কের নাম। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সচেতনতা।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রথমেই দরকার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারের অভ্যাস। একটি নিরাপদ পাসওয়ার্ড হতে হবে অন্তত ১২ অক্ষরের, যাতে ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন থাকে। একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার না করে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করাও বুদ্ধিমানের কাজ।
অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বা দুই ধাপের যাচাই ব্যবস্থা চালু রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে পাসওয়ার্ড ছাড়াও দ্বিতীয় একটি স্তরের নিরাপত্তা যোগ হয়, যা হ্যাকারদের কার্যত ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
সাইবার অপরাধীদের অন্যতম কৌশল হলো ফিশিং ইমেইল বা স্ক্যাম মেসেজ। লোভনীয় অফার বা পুরস্কারের প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হয়ে সন্দেহজনক লিংক বা অচেনা উৎস থেকে আসা ফাইল ডাউনলোড থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো মেইল বা এসএমএস নিয়ে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল সাইট বা হেল্পলাইন থেকে যাচাই করা উচিত।
কম্পিউটার, মোবাইল এবং অন্যান্য সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত আপডেট রাখা নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরোনো ভার্সনে নিরাপত্তার ফাঁক থেকে যায়, যেগুলো হ্যাকাররা সহজেই কাজে লাগায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সচেতন থাকা জরুরি। ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা লোকেশন শেয়ারের আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন। প্রাইভেসি সেটিংস ঠিকমতো নির্ধারণ করুন এবং অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করুন এবং এই নেটওয়ার্কে ব্যাংকিং বা ব্যক্তিগত তথ্য সংক্রান্ত কাজ না করাই উত্তম।
গুরুত্বপূর্ণ ডাটা বা ফাইল নিয়মিত ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কোনো সাইবার হামলার কারণে ডাটা হারিয়ে গেলে যেন ক্ষতির মাত্রা কম হয়, সেই প্রস্তুতি থাকা উচিত।
সবচেয়ে বড় কথা হলো—সাইবার নিরাপত্তা শুধু প্রযুক্তি নির্ভর বিষয় নয়, এটি সামাজিক সচেতনতারও বিষয়। নিজের পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের মধ্যে এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিন। নিজের ডিজিটাল নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। কারণ একটু সচেতনতা আর কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই আপনি সাইবার ঝুঁকি থেকে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পারেন।