শেরপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস: ৭ ডিসেম্বর
১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর শেরপুরের মুক্তিকামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে শেরপুর অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করেন। এ ঐতিহাসিক দিনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা শেরপুরে উপস্থিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেরপুরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা দেন। এ সময় প্রথমবারের মতো মুক্ত শেরপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
স্বাধীনতার সংগ্রাম এবং শেরপুরের ভূমিকা
স্বাধীনতার ডাকের পর শেরপুরবাসী পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়। ১৯৭১ সালের ২৬ এপ্রিল পাক সেনারা শেরপুর শহরে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। স্থানীয় দালালদের সহায়তায় দোকানপাট লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ও ধর্ষণের মতো নিষ্ঠুরতা চালানো হয়। শেরপুর ও এর আশপাশের অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা ১১নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় লড়াই চালিয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী
- ২৪ অক্টোবর ১৯৭১: কামালপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অবরোধ শুরু হয়।
- ১৪ নভেম্বর ১৯৭১: তুমুল সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুদের মনোবল ভেঙে দেয়। তবে এ যুদ্ধে কর্নেল আবু তাহের গুরুতর আহত হন এবং একটি পা হারান।
- ২৪ নভেম্বর ১৯৭১: শেরপুর সদর থানার কামারিয়া ইউনিয়নের সুর্যদী গ্রামে পাকবাহিনী ৪৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।
- ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১: কামালপুর ঘাঁটিতে পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে।
বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্ত
৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকবাহিনী শেরপুর ছেড়ে জামালপুরে পিছু হটে। এরপর ৭ ডিসেম্বর শেরপুর শত্রুমুক্ত হয় এবং শহরের আকাশে বিজয়ের পতাকা উড়তে শুরু করে।
এই দিনটি শেরপুরবাসীর কাছে মুক্তি ও বিজয়ের প্রতীক হয়ে রয়েছে এবং জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে শেরপুরের অবদানের একটি গৌরবময় অধ্যায়।