শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দমন-পীড়নের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ১০৫ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্দোলন দমন করতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্বিচার গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, ছাত্র ও সাধারণ জনগণের অভ্যুত্থান ঠেকাতে সরকার মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে। এতে অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার প্রমাণ মিলেছে। জাতিসংঘের অনুসন্ধান দল আটটি শহরে তদন্ত চালিয়ে ২৩০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নেয়। এ ছাড়া সরকারের সাবেক ও বর্তমান ৩৬ জন কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। বিশেষ করে ২১ জুলাই ও ৫ আগস্ট সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দমন-পীড়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জাতিসংঘের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়ংকর কিছু তথ্য—
🔸 বিচারবহির্ভূত হত্যা: আন্দোলনকারীদের গোপনে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়।
🔸 নির্বিচার গুলি: নিরাপত্তা বাহিনী সরাসরি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়।
🔸 গণগ্রেপ্তার ও নির্যাতন: সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
🔸 চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত করা: আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি, অনেককে হাসপাতাল থেকেই তুলে নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারদলীয় সংগঠনগুলোকেও এই দমন-পীড়নে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে ‘গুম’ করার কাজে লিপ্ত ছিল।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিচারের দাবি তুলেছে এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ঘটনার জন্য সাবেক সরকারের শীর্ষ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। তবে জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।