শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। ভারতে পলায়নকারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম। তার মতে, ঈদুল আজহার ছুটির আগেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আরও অভিযুক্ত হচ্ছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তদন্ত শেষে ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ প্রতিবেদন জমা দেয়।
প্রসিকিউটর তামীম জানান, আইসিটি আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমেই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এই মামলায় আনুমানিক ৫০ জন সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। শেখ হাসিনাকে “মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার” হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে যেহেতু শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক, তাই বিজ্ঞপ্তি জারি করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হবে। হাজির না হলে তাদের পলাতক ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী নিযুক্ত করা হবে।
প্রথম অভিযোগে শেখ হাসিনার একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হবে, যেখানে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে আখ্যায়িত করেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, এই বক্তব্য বিভিন্ন বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংস হতে উসকে দেয়। দ্বিতীয় অভিযোগে সরাসরি হত্যা ও অঙ্গহানির নির্দেশনার অভিযোগ রয়েছে, যার সমর্থনে অডিও রেকর্ড ও ভিডিও ফুটেজ আদালতে দাখিল করা হবে।
বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের অধীনে জুলাইয়ের আন্দোলন ঘিরে মোট ২৫টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে একটি মামলার ফরমাল চার্জ ইতোমধ্যে দাখিল করা হয়েছে। বাকি ২৩টি তদন্তাধীন।
বিচার কতদিনে শেষ হতে পারে, এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর না দিলেও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইঙ্গিত দিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূসের শাসনামলেই এই মামলার রায় পাওয়া যাবে। ফেসবুকে তিনি উল্লেখ করেছেন, “মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনার মামলার শুনানি পর্ব শুরু হচ্ছে অচিরেই। ইনশাল্লাহ, রায়ও দ্রুতই আসবে।”
এই বিচারকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলছে চাঞ্চল্য ও আলোচনা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরিচালিত এই বিচার কার্যক্রম দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।