শেখ হাসিনার বিচারই সরকারের প্রধান কাজ: ফরিদা আখতার

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জোর দিয়ে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, “দেশের মাটিতে এই সরকারের আমলেই শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে। জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের রক্তের ঋণ শোধ করতে গণহত্যাকারীদের বিচারই এখন সবচেয়ে জরুরি।”

মিরপুরে জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্সের অনুষ্ঠান

গত শনিবার (১২ এপ্রিল, ২০২৫) রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী মাজারে ‘জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর’ আয়োজিত ‘গণমানুষের জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ, আহতদের সম্মাননা ও বিচারের দাবি জোরালোভাবে উঠে আসে।

ফরিদা আখতার বলেন, “আমরা দেখেছি, কেউ তাদের সন্তানের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেনি, কেউ বলেনি তাদের ছেলে ভুল করেছে। শহীদ ও আহতরাও কখনো বলেনি তারা ভুল পথে ছিল। তারা শুধু একটি কথাই বলেছে—তারা বিচার চায়। এই বিচার আমাদের নিশ্চিত করতেই হবে।” তিনি জুলাই আন্দোলনে আহতদের কথা উল্লেখ করে বলেন, “কারো হাত নেই, কারো পা নেই, কারো চোখ নেই। এই তরুণ প্রাণগুলোর জীবন একদিন আগেও উজ্জ্বল ছিল, এখন তাদের সামনে অন্ধকার। তাদের এই ত্যাগ আমাদের বারবার প্রতিজ্ঞা নিতে বাধ্য করে।”

সরকারের বৈধতা ও দায়িত্ব

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, “কে বলেছে আমরা অনির্বাচিত? ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে এই পরিবর্তন এসেছে। তারাই আমাদের নির্বাচিত করেছে। তাই আমাদের দায়িত্ব তাদের দাবি পূরণ করা। গণহত্যার বিচারে কোনো ভুল হতে পারে না।”

শহীদ পরিবারের ক্ষোভ

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মিরপুরে শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান, শহীদ আকরাম খান রাব্বির বাবা ফারুক খান, শহীদ গোলাম নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, শহীদ ইমাম হোসেন তাইয়েমের ভাই রবিউল আউয়াল এবং শহীদ আহনাফের মা জারতাস পারভীন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এখনো বিচারের কোনো অগ্রগতি দেখছি না। বিচারের নামে প্রহসন চলছে। অনেক জায়গায় মামলা নেওয়া হচ্ছে না, উলটো আমরা হেনস্থার শিকার হচ্ছি। আমরা চাই, এই সরকার দ্রুত গণহত্যাকারীদের বিচার করুক।”

অনুষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজন

অনুষ্ঠানে গরিব-অসহায়দের জন্য মেডিকেল ক্যাম্প, জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি ও ছবি প্রদর্শনী, কবিতা পাঠ, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ভাবগান এবং বইমেলার আয়োজন করা হয়। জুলাই আন্দোলনে আহত ও সম্মুখসারির যোদ্ধাদের স্মৃতিচারণও ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বাস স্ট্যান্ড ও লঞ্চঘাটে মানুষের জন্য বিনামূল্যে ওয়াইফাই সুবিধা চালু করা হবে। এটি তাদের যোগাযোগ সহজ করবে।

উপস্থিত ব্যক্তিরা

অনুষ্ঠানে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, আকিজ ইনসাফ গ্রুপের সিএমও শফিকুল ইসলাম তুষার, জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুরের সদস্য তৌফিক হাসান, উদয় হাসান, সিলমী সাদিয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মোহাম্মদ রোমেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।

শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মাননা

অনুষ্ঠানে আকিজ ইনসাফ গ্রুপের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে উপহার সামগ্রী এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের স্মরণে এই অনুষ্ঠান ছিল একটি আবেগঘন সমাবেশ। ফরিদা আখতারের বক্তব্য এবং শহীদ পরিবারের দাবি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, গণহত্যার বিচার এখন দেশের জনগণের প্রধান প্রত্যাশা। এই দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।