শিক্ষিকার পোশাক নিয়ে ছাত্রদল নেতার কটূক্তি, জাবিতে বিক্ষোভ
শিক্ষিকার পোশাক নিয়ে ছাত্রদল নেতার কটূক্তি, জাবিতে বিক্ষোভ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সহকারী প্রক্টর ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলির পোশাক নিয়ে ছাত্রদল নেতা নবীনুর রহমান নবীনের কটূক্তির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। নবীন শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এবং ইতিহাস বিভাগের ৩৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
বুধবার (১ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি রেজিস্ট্রার ভবন সংলগ্ন সড়ক ঘুরে প্রক্টর অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশও করেন। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ছাত্রদল নেতা নবীনের কটূক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার বিষয়টিকে আরও গুরুত্বসহকারে নেওয়ার দাবি জানান।
ঘটনার সূত্রপাত হয় থার্টি ফার্স্ট নাইটের রাতে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি একটি প্রাইভেটকার থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এ সময় এক তরুণী নিজেকে ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দেন। ছাত্রদল নেতা নবীন এসে তরুণীকে চলে যেতে বলেন। এরপর সহকারী প্রক্টর শামীমা নাসরীন জলির কাছে তরুণী পরিচয় জানতে চাইলে, নবীন তাকে তিরস্কার করেন এবং সহকারী প্রক্টরের পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বোরকা, হাতমোজা এবং পা-মোজা নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তীব্রভাবে অভিযুক্ত করেছেন। ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার অন্তর বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, “যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ভালো কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তখন সেটার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করা আমাদের কর্তব্য। নবীনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করতে হবে।”
জাবির সহকারী প্রক্টর শামীমা নাসরীন জলি বলেন, “আমি তাকে নমনীয়ভাবে কথা বললেও তিনি আক্রমণাত্মকভাবে আমার পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কেন একজন শিক্ষিকাকে পোশাক নিয়ে অপমানিত হতে হবে?” তিনি আরও জানান, “এ ধরনের ঘটনা নতুন স্বাধীনতার পর একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং এভাবে নারী শিক্ষকদের প্রতি সম্মানহানির ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।”
এ বিষয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা নবীনুর রহমান নবীনের বক্তব্য ছিল, “আমি সেখানে ক্যাম্পাসের সাবেক একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে কথা বলছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিজেদের মতো ঘুরে আসা, কোনো অপকর্ম করা ছিল না। আমরা গাড়ির কাগজপত্রও দেখিয়েছিলাম এবং পরিস্থিতি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলাম।”
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ও বিক্ষোভ সৃষ্টি হলেও প্রশাসন জানায়, তারা তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, ছাত্রদল নেতা নবীনের আচরণ নারীবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে এটি কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।