নানান আলোচনা ও উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেড এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত তিন ইসরাইলির নাম— আলেকজান্ডার ‘সাশা’ ট্রুফানভ, সাগুই ডেকেল-চেন ও ইয়ের হর্ন।
হামাসের ঘোষণার পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে, তারা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে এই তিনজনের তালিকা পেয়েছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবহিত করেছে জিম্মিদের পরিবারকেও।
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস তিন ইসরাইলি নাগরিককে মুক্তি দিলে, এর বিনিময়ে শনিবার ইসরাইলি কারাগার থেকে ৩৬৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের প্রিজনার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে ৩৩৩ জনকে ৭ অক্টোবরের পর কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল। এছাড়া, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৬ জনকেও মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ধাপে ধাপে বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া চলছিল। তবে গত সোমবার হামাস অভিযোগ তোলে যে, ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এরপর তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য জিম্মি মুক্তির কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "আগামী শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে সব ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে, না হলে যুদ্ধবিরতি বাতিল করা হবে।"
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানান, হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে গাজায় পুনরায় হামলা চালাবে ইসরাইল।
চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত ১৬ ইসরাইলিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। পাশাপাশি, তাদের উদ্যোগে পাঁচজন থাই নাগরিককেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইল কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দিয়েছে।
প্রথম দফার চুক্তি অনুযায়ী, মোট ৩৩ ইসরাইলিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।
হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। হামাস তাদের শর্ত মেনে চলার দাবি জানালেও, ইসরাইল পাল্টা অভিযোগ এনে কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রশাসনও পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।
শনিবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হামাস যদি তিন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়, তবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে মুক্তি কার্যকর না হলে গাজায় আবারও সামরিক অভিযান শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র।