লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় জাহাজ ডুবি, নিহত ৩, নিখোঁজ ১৯
লোহিত সাগরে হুথি বিদ্রোহীদের হামলায় গ্রিস-পরিচালিত একটি পণ্যবাহী জাহাজ ‘ইটার্নিটি সি’ ডুবে গেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং ১৯ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় নৌ মিশন। উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনকে।
যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সংস্থা (UKMTO) জানিয়েছে, লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এই জাহাজটিতে ২৫ জন ক্রু ছিলেন। সোমবার একটি ছোট নৌযান থেকে ছোড়া রকেটচালিত গ্রেনেডের আঘাতে জাহাজটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মঙ্গলবার রাতজুড়ে চলে উদ্ধার অভিযান। হুথি গোষ্ঠী দাবি করেছে, জাহাজটি ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল এবং তারা অনির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রুকে “নিরাপদ স্থানে” নিয়ে গেছে।
ইয়েমেনে অবস্থানরত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, “জীবিত অনেক ক্রু সদস্যকে অপহরণ করেছে হুথিরা” এবং তাদের দ্রুত মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজের ২১ জন ক্রু ছিলেন ফিলিপাইনের নাগরিক। বাকিদের মধ্যে একজন রাশিয়ান নাগরিক হামলায় গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছেন। এছাড়া একজন ভারতীয়ও নিখোঁজ রয়েছেন।
ইউরোপীয় নৌ মিশন ‘অপারেশন অ্যাসপাইডস’ জানিয়েছে, তারা হামলার প্রতিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে এবং ছয়জনকে উদ্ধার করেছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পাঁচজন নাবিককে পানিতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় থাকার পর উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, রোববার আরেকটি লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী গ্রিক-পরিচালিত জাহাজ ‘ম্যাজিক সি’তে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুথিরা। ওই ঘটনায় জাহাজটি ডুবে না গেলেও এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে হুথিদের হামলায় প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৪টি ডুবে গেছে, ৫টি জব্দ করা হয়েছে এবং ৭ জন নাবিক নিহত হয়েছেন।
এই হামলার জেরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “হুথি সন্ত্রাসী হামলা নৌ চলাচলের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।” যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা এসব আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (IMO)-এর মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিঙ্গুয়েজ লোহিত সাগরে এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই হামলার প্রধান শিকার হচ্ছে নিরীহ নাবিক ও স্থানীয় জনগণ।
উল্লেখ্য, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছালেও হুথিরা জানিয়েছে, তাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করার কথা ছিল না। তাই তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ বাড়ছে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।