লেবাননে নতুন সরকার, নওয়াফ সালামের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন
লেবাননে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। সাবেক কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সাবেক বিচারক নওয়াফ সালামকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। নতুন এই সরকারে হিজবুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা স্থান পেয়েছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক ঘোষণায় জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির পদত্যাগ গৃহীত হয়েছে এবং নতুন সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিক ডিক্রি জারি করা হয়েছে। মিকাতির নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে অন্তর্বর্তীকালীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল, যা দেশের দীর্ঘ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ছিল।
নতুন মন্ত্রিসভার গঠন প্রসঙ্গে জানানো হয়, লেবাননের ঐতিহ্যবাহী ক্ষমতা ভাগাভাগির নীতি অনুযায়ী ২৪ সদস্যের মন্ত্রিসভায় মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সমানভাবে বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে হিজবুল্লাহ ও আমাল মুভমেন্টকে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে আমাল মুভমেন্ট তিনটি এবং হিজবুল্লাহ দুটি মন্ত্রণালয় পেয়েছে।
তবে লেবাননের নতুন সরকারে হিজবুল্লাহর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপ-বিশেষ দূত মরগান ওর্টাগাস আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন যে, হিজবুল্লাহর মন্ত্রিত্ব পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘রেড লাইন’। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন চায় না যে লেবাননের সরকারে হিজবুল্লাহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক। তবে লেবানন সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করেছে।
শপথ গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেছেন, তার সরকার লেবাননের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে দেশটিকে স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি কার্যকর সরকার গঠন করেছি, যা দেশের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে কাজ করবে।’’
বর্তমানে লেবানন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ তাদের জমানো অর্থ ব্যাংক থেকে তুলতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ খাত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, যার ফলে দৈনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সময়সীমা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় নেমে এসেছে। বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, লাখ লাখ নাগরিক কঠিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে।
নতুন সরকারের দায়িত্ব এখন এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করা। নওয়াফ সালাম আশ্বাস দিয়েছেন, তার নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনৈতিক ও বিচারিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে লেবাননের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাবেক সেনাপ্রধান জোসেফ আউন নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে দেশটিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা প্রেসিডেন্টশূন্যতার অবসান ঘটে। নতুন সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকেও দেশটি এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।