‘রাতের ভোটে’র ৩০ জেলা প্রশাসক এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল তবিয়তে
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, যা ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিত, সেই নির্বাচনে ভূমিকা রাখা ৩০ জেলা প্রশাসক এখনও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে বহাল রয়েছেন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জেলা প্রশাসকরা এখনও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসলেও তারা রাতের ভোটের সেই কর্মকর্তা-গণকে সরানোর বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন আনারকলি মাহবুব, যাকে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে শেরপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি যুগ্মসচিব হিসেবে কাজ করছেন।
এছাড়া, রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. সাবিনা ইয়াসমিন এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো: হামিদুল হক সহ একাধিক কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সৈয়দা ফারহানা কাওনাইন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া তিন সাবেক জেলা প্রশাসক।
এছাড়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: মাজেদুর রহমান খান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মো: ফেরদৌস খান সহ অন্যান্য জেলা প্রশাসকরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কাজ করছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের একক জয় নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ছিল। টিআইবি’র এক গবেষণায় উঠে আসে, এই নির্বাচনে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতে কোনো না কোনো অনিয়ম ঘটেছিল। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার বইয়ে এই নির্বাচনের পরিস্থিতি এবং ফলাফলকে ‘রাতের নির্বাচন’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
এ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ও ভোটের পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, কিছু কেন্দ্রের ভোটের হার ছিল ৯৬% এবং ১০০%, যা সন্দেহের সৃষ্টি করেছিল। এর মাধ্যমে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তৈরি হয়েছিল।