পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার গভীর রাতে আফগানিস্তানের খোস্ত প্রদেশের আলিশের জেলায় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী তুমুল লড়াই হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজের বরাতে জানা যায়, পাকিস্তানি বাহিনী রাত দেড়টায় প্রথম রকেট হামলা চালায়, যার জবাবে আফগান বাহিনী পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সংঘর্ষটি ভোর পাঁচটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
এই ঘটনায় আলিশের জেলার বাসিন্দারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা হাকীমুল্লাহ জানান, "পাকিস্তানি বাহিনী রাত ১টা ৩০ মিনিটে রকেট হামলা চালায়। এরপর আফগান বাহিনী প্রতিরোধ শুরু করে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে।" আরেক বাসিন্দা দৌলত খান বলেন, "এই সংঘাত সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। দরিদ্র মানুষ গ্রামে যাতায়াতের সামর্থ্য হারাচ্ছে। সংঘর্ষের ভয়ে আমরা নিরাপদ বোধ করছি না।"
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে এমন সংঘর্ষের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। গত ২৫ ডিসেম্বর আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর চালানো এক হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। ওই ঘটনার জবাবে ২৮ ডিসেম্বর আফগান বাহিনী পাল্টা হামলা চালায়, যাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অন্তত ১৯ জন সদস্য নিহত হয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং সংঘাত বেড়েই চলেছে।
সংঘর্ষে কোনো হতাহতের তথ্য এখনও নিশ্চিত করা না হলেও দুই দেশের উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সামরিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে এর প্রভাব পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ও সাধারণ মানুষের ওপর আরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই ধরনের সংঘর্ষের কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাকিস্তানের একের পর এক হামলার জেরে আফগান জনগণের মধ্যে ক্রমশ ক্ষোভ দানা বাঁধছে। খোস্ত প্রদেশের জনগণের মতে, এই সংঘাত যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে আরও বড় সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আফগান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ, তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান। সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলো দুই দেশের সম্পর্ককে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।