যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ইরান, তবে পরোক্ষ আলোচনায় রাজি – আব্বাস আরাগচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, ইরান যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা ভীত নয়। তবে তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, ইরান আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে চায় এবং পরোক্ষ আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা নিরসনে ইচ্ছুক। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই বক্তব্য এসেছে, যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুতাপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত কয়েক মাসে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক পদক্ষেপ এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরাগচি গত রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইরান-ইসলামি প্রজাতন্ত্র যুদ্ধ থেকে ভয় পায় না। আমরা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে আমরা এই অঞ্চলে যুদ্ধ চাই না।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েল যদি কোনো হামলা চালায়, তবে ইরান তার জবাব দেবে এবং সেই প্রতিক্রিয়া হবে সমান মাত্রার। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইরান নিজেকে রক্ষার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না।
ইরানের সামরিক শক্তি বিশ্বে উল্লেখযোগ্য। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরান ১৪তম স্থানে রয়েছে। তাদের কাছে রয়েছে ৭৭৫টি মোবাইল রকেট প্রজেক্টর এবং ১০১টি যুদ্ধজাহাজ, যা তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। এছাড়া, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতিকে আরও জোরদার করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই প্রস্তুতি ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, যারা পাওয়ার ইনডেক্সে ১৭তম স্থানে রয়েছে।
তবে, আরাগচি শান্তির পথেও আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা পরোক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আমরা উত্তেজনা কমাতে চাই।” এই মন্তব্য এসেছে এমন সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি দল তেহরান সফর করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে, যা ইরান ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। গাজায় ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনা ইরানকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। ইরানের সমর্থিত এই গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও পাল্টা হামলার হুমকি দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরাগচির এই বক্তব্য আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের এই দ্বিমুখী নীতি—যুদ্ধের প্রস্তুতি ও শান্তির প্রস্তাব—একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তারা নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে সুবিধা আদায় করতে চায়। তবে, পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে, যারা এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত, আরাগচির বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট যে, ইরান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকলেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের দরজা এখনও খোলা রেখেছে। ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।