যুদ্ধবিরতির মধ্যেই লেবাননে ইসরায়েলের হামলা, বেসামরিকদের মধ্যে আতঙ্ক
যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর থাকলেও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) নাবাতিহ শহরে চালানো এই হামলায় অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর অস্ত্র পরিবহনকারী একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালিয়েছে।
তবে লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হামলায় বেসামরিক নাগরিকেরাও আহত হয়েছেন এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ড্রোন থেকে ছোড়া গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র একটি পিকআপ ট্রাকে আঘাত হানে, যা ধ্বংস হয়ে যায়। বিস্ফোরণের কারণে আশপাশের ভবন ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাধারণ পথচারীরা আহত হয়েছেন।
লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন। মার্কিন জেনারেল জ্যাসপার জেফার্সের সঙ্গে আলোচনায় তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কড়া চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।
নাবাতিহের আল-ফাওকার এলাকার মেয়র ইয়াসির গান্দুর বলেন, ‘‘ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তাদের হামলার কারণে নিরাপরাধ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।’’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ আশপাশের এলাকায় প্রতিধ্বনিত হয় এবং ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রে গোটা শহর স্তব্ধ হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হয়ে ওঠে। লেবানন থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি সেনা চৌকি ও ভূখণ্ডে হামলা চালানো হয়, যার পাল্টা জবাবে ইসরায়েলও হামলা অব্যাহত রাখে। এতে এ পর্যন্ত লেবাননে প্রায় ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১২ লাখ মানুষ।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘাত বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহকেও তাদের অস্ত্র ও সেনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। তবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলেও ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে অবস্থান করছে এবং হামলাও অব্যাহত রেখেছে, যা এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালানো অব্যাহত রাখলে লেবাননে নতুন করে সংঘাত জোরদার হতে পারে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।