যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস বিষয়ক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আইসিই গত ২৩ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ দিনে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ৭ হাজার ২৬০ জন নথিবিহীন অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।
আইসিইর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৫ হাজার ৭৬৩ জনকে বন্দিশালায় রাখা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। কিছু অভিবাসীকে কিউবার গুয়ান্তানামো কারাগারে পাঠানোর পরিকল্পনাও রয়েছে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সংস্থাটি এই তথ্য জানিয়েছে।
আইসিইর অভিযানের মূল কেন্দ্র ছিল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের নিউইয়র্ক সিটি, ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের শিকাগো এবং ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহর। সংস্থাটির দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া অভিবাসীদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি যৌন সহিংসতা, বন্দুক সংক্রান্ত অপরাধ ও মাদক পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচারণার সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় ফিরে আসলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধ অভিবাসীমুক্ত করবেন। গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর, তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন জনগণকে সুরক্ষা প্রদান’ নামের আদেশ, যা আইসিইর অধীনে কঠোর অভিবাসন অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নথিবিহীন অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে চলে যাচ্ছেন কিংবা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি নথিবিহীন অভিবাসী বসবাস করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য, অন্তত ১ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতি কেবল অভিবাসীদের জীবনকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে কৃষি, নির্মাণ ও পরিষেবা খাতে কর্মরত অভিবাসীদের অনুপস্থিতি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই কঠোর অবস্থানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই অভিযানের ফলে অনেক নিরপরাধ অভিবাসীও শিকার হচ্ছেন এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে হোয়াইট হাউস বলছে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।