শনিবার, ৫ই জুলাই, ২০২৫| রাত ১:৩৩

যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ হলো সিদ্ধান্ত ছাড়াই, ৮ জুলাই ‘ফাইনাল রাউন্ড’

প্রতিবেদক
staffreporter
জুলাই ৪, ২০২৫ ৬:০২ অপরাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ হলো সিদ্ধান্ত ছাড়াই, ৮ জুলাই ‘ফাইনাল রাউন্ড’

যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ হলো সিদ্ধান্ত ছাড়াই, ৮ জুলাই ‘ফাইনাল রাউন্ড’

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য রফতানি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহারের লক্ষ্যে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের প্রথম দফার আলোচনা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। তবে আলোচনার পরিবেশ ছিল ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’ ও ‘ইতিবাচক’—এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আলোচনার দ্বিতীয় দফা বসবে আগামী ৮ জুলাই, শুল্ক স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে।

২০২৫ সালের ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘বাণিজ্য ঘাটতি কমানো’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষার’ অজুহাতে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন, যার ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে। বাংলাদেশ তীব্র কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানালে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য শুল্ক কার্যকারিতা স্থগিত রাখা হয়।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ওয়াশিংটনের ইউএসটিআর (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়)-এ এই আলোচনার প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত দূতাবাসের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চ। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

সূত্রমতে, আলোচনার মূল অচলাবস্থার পেছনে রয়েছে তিনটি জটিল শর্ত—রুলস অব অরিজিনে পরিবর্তন, ভূ-রাজনৈতিক সঙ্গতি, এবং শুল্ক পারস্পরিকতার প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র চায়, বাংলাদেশ কাঁচামাল আঞ্চলিক উৎস থেকে সংগ্রহ করুক, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একচেটিয়া শুল্ক সুবিধা দিক। বাংলাদেশ এসব শর্ত মানলে ছোট উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈদেশিক নীতিতে ভারসাম্য হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ঢাকা।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এই পরিস্থিতিকে গার্মেন্ট খাতের জন্য “বড় হুমকি” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক, ভূ-রাজনীতি, ভারতীয় ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, সুদের হার ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে শিল্প এখন জটিল চ্যালেঞ্জে।” তবে তিনি আশাবাদী যে ৮ জুলাইয়ের আলোচনায় একটি চুক্তির দিকে অগ্রগতি হবে।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যে তিন দফা খসড়া বিনিময়, চারটি বৈঠক এবং ২৯টি যোগাযোগ হয়েছে। তার মতে, বাংলাদেশের মতো এত সক্রিয়ভাবে কেউ আলোচনা করেনি, এবং বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সঙ্গে একতরফা শুল্ক চুক্তি করলেও ইন্দোনেশিয়া কঠিন শর্তের কারণে আলোচনা থেকে সরে গেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় এখন শুধু বাংলাদেশই আলোচনায় টিকে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই শুল্ক কার্যকর হয়, তবে রফতানি হ্রাস, বাজার হারানো এবং লাখো শ্রমিকের জীবিকায় হুমকি তৈরি হবে। আর তাই ৮ জুলাইয়ের বৈঠকটিকে ‘ফাইনাল রাউন্ড’ হিসেবে দেখছেন সবাই।

সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতা বুঝবে বলে আশাবাদী। তবে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলেও আমাদের কৌশলগত বিকল্প প্রস্তুত রয়েছে।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত