যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্কে বিপদে বাংলাদেশের রফতানি খাত: তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধসের শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের রফতানি পণ্যের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানিকারকদের এখন থেকে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতে পারে (বর্তমান ১৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ)। এই শুল্ক আগামী ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের জন্য এক বড় ধরনের ধাক্কা।
বিশ্লেষকদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজারে প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, মার্কিন ক্রেতারা এত উচ্চ শুল্কে আর বাংলাদেশি পণ্য কিনতে আগ্রহী হবেন না। এতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
চট্টগ্রামের ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, “৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে মার্কিন ক্রেতারা আমাদের পোশাক কেনার আগ্রহ হারাবেন। এতে রফতানিতে বড় ধস নামতে পারে।”
বাণিজ্য আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কূটনৈতিক ধীরগতি, সময়মতো প্রস্তুতির অভাব, এবং লবিংয়ের ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে। বিজিএমইএ এবং সংশ্লিষ্ট মহলের একাধিক বার অনুরোধ সত্ত্বেও সরকার কোনও লবিস্ট নিয়োগ করেনি। একই সময়ে ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল বাণিজ্য চুক্তি করেছে, যেখানে বাংলাদেশ এখনও প্রাথমিক আলোচনা পর্যায়েই রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন শুল্ক এড়াতে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করলেও কার্যকর কোনও সমাধান হয়নি। বরং, অতিরিক্ত সময় চাওয়ার পরও ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি শুল্ক আরোপের চূড়ান্ত ঘোষণা পাঠায়।
এই শুল্ক আরোপ সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে তৈরি পোশাক, চামড়া, ও হোম টেক্সটাইল খাতকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানি প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার, যার ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক। অতিরিক্ত শুল্কের ফলে ক্রেতারা ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মেক্সিকোর মতো বিকল্প উৎসে ঝুঁকতে পারেন।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, “এটি শুধু পোশাক শিল্প নয়, পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্মসংস্থানের ঝুঁকি বাড়বে, কারখানা বন্ধ হতে পারে।” তার মতে, এই সংকট আমাদের বহুমুখী শিল্প গড়ার তাগিদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু বলছেন, “শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে তিন সপ্তাহ সময় রয়েছে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে একজন দক্ষ লবিস্ট নিয়োগ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আলোচনা টেবিলে আনা জরুরি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক কেবল একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, বরং কূটনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলনও। তাই সংকট উত্তরণে বাংলাদেশকে দ্রুত ও সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে, নতুবা রফতানি, কর্মসংস্থান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা—সবই হুমকির মুখে পড়তে পারে।