ইরানের অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মতিকে বরখাস্ত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। গত কয়েক মাসে ইরানি মুদ্রার ঐতিহাসিক দরপতন এবং চরম মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। জনগণের অসন্তোষের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের বড় একটি অংশও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যার ফলে অনাস্থা ভোটে তাকে অপসারণ করা হয়।
রোববার (২ মার্চ) পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত অনাস্থা ভোটে উপস্থিত ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৮২ জন হেম্মতির বিরুদ্ধে ভোট দেন, যা তার বরখাস্তের পথ সুগম করে। বিপক্ষে ভোট দেন ৮৯ জন। ভোটের মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
হেম্মতির বরখাস্তের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো ইরানের মুদ্রার মূল্যমানের ব্যাপক পতন। ইরানি রিয়াল ডলারের বিপরীতে নজিরবিহীনভাবে দর হারিয়েছে। বর্তমানে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৯ লাখ ২৭ হাজার ইরানি রিয়াল লেনদেন হচ্ছে, যেখানে মাত্র আট মাস আগেও এই হার ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ রিয়াল। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যে রিয়ালের মান প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এর পাশাপাশি দেশটিতে তীব্র মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকুচিত হওয়া, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা, এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বল নীতির কারণে ইরানের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া অর্থমন্ত্রী আবদোলনাসের হেম্মতি ছিলেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের ঘনিষ্ঠ। প্রেসিডেন্ট তার প্রতি আস্থা রাখলেও সংসদ সদস্যরা তার কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় হেম্মতি ব্যর্থ হয়েছেন।
প্রায় আট মাস আগে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু তার নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তিনি নানা সমালোচনার মুখে পড়েন। তার সময়কালে ইরানের মুদ্রানীতি কার্যকরভাবে সামলানো যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
হেম্মতির অপসারণের পর ইরানের অর্থনৈতিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা, সেটিই এখন দেখার বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অর্থমন্ত্রী পরিবর্তন করলেই সংকট কাটবে না, বরং গঠনমূলক সংস্কার প্রয়োজন। তবে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে কে আসছেন, সে বিষয়ে এখনো সরকার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি।
ইরানে অর্থনৈতিক অস্থিরতা কমাতে সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে দেশটির জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। মুদ্রার মান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ইরানে আরও বড় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।