আজকের আধুনিক বিশ্বে গাড়ি ছাড়া জীবন কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু একসময় মানুষকে শুধু ঘোড়া, গরুর গাড়ি বা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করতে হতো। সেই চিত্র বদলে দেয় এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন— পৃথিবীর প্রথম স্বচালিত গাড়ি। এটি তৈরি করেছিলেন জার্মান প্রকৌশলী কার্ল বেঞ্জ, যার আবিষ্কার বিশ্বের পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল।
১৮৮৫ সালে কার্ল বেঞ্জ প্রথমবারের মতো একটি গ্যাসোলিনচালিত স্বয়ংক্রিয় গাড়ি উদ্ভাবন করেন, যা পরে ‘বেন্জ পেটেন্ট-মোটরওয়াগেন’ নামে পরিচিত হয়। এটি ছিল তিন চাকার একটি ছোট যান, যাতে একটি ০.৭৫ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছিল। এই গাড়িটি ঘণ্টায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারত, যা সে সময়ের জন্য ছিল এক অবিশ্বাস্য প্রযুক্তিগত সাফল্য।
প্রথমদিকে, মানুষের কাছে এই নতুন যান অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। কিন্তু ১৮৮৮ সালে বেঞ্জের স্ত্রী, বার্থা বেঞ্জ, এই গাড়ির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে এক ঐতিহাসিক ভ্রমণে বের হন। তিনি বিনা অনুমতিতে ১০৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দেখিয়ে দেন যে স্বয়ংক্রিয় যান সত্যিই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা সম্ভব। এই যাত্রার ফলে জনসাধারণ ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে, এবং অটোমোবাইল শিল্পের ভিত্তি স্থাপন হয়।
বেঞ্জ পেটেন্ট-মোটরওয়াগেনের পর দ্রুতই উন্নয়ন শুরু হয়। ১৯০০ সালের শুরুর দিকেই হেনরি ফোর্ড স্বল্পমূল্যের ‘মডেল টি’ গাড়ি বাজারে আনেন, যা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে ছিল। এই উদ্ভাবন গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেয় এবং আধুনিক গাড়ি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
আজ, সেই প্রথম গাড়ি থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক ও স্বচালিত গাড়ির যুগে প্রবেশ করেছে পৃথিবী। কিন্তু কার্ল বেঞ্জের সেই যুগান্তকারী আবিষ্কার না থাকলে, আজকের বিশ্ব হয়তো এত দ্রুত এগোতে পারত না। ইতিহাস সাক্ষী, একটি ছোট্ট উদ্ভাবন কীভাবে পুরো মানব সভ্যতার গতিপথ বদলে দিতে পারে।