মানব সভ্যতার এক মহান সাফল্য: পৃথিবীর প্রথম উড়োজাহাজের জন্ম
মানবজাতির হাজার বছরের স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছিল ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর, যখন রাইট ভ্রাতৃদ্বয় – অরভিল এবং উইলবার রাইট – পৃথিবীর প্রথম কার্যকর উড়োজাহাজ আকাশে ওড়াতে সক্ষম হন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার কিটি হক শহরে তাদের উদ্ভাবিত ‘ফ্লায়ার ১’ নামক উড়োজাহাজটি প্রথমবারের মতো সফলভাবে উড়ে এবং মানব ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়।
রাইট ভ্রাতৃদ্বয় ছোটবেলা থেকেই মেশিন এবং প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তারা বাইসাইকেল ব্যবসার পাশাপাশি উড্ডয়ন সংক্রান্ত গবেষণা করতেন। ১৯০০ সালে তারা কিটি হকে এসে পরীক্ষামূলক গ্লাইডার বানানো শুরু করেন। বহু ব্যর্থতা ও সংশোধনের পর, তারা এমন এক উড়োজাহাজ তৈরি করেন যা নিজস্ব ইঞ্জিনের শক্তিতে আকাশে উড়তে সক্ষম ছিল।
‘ফ্লায়ার ১’ ছিল কাঠ, কাপড় ও তারের সমন্বয়ে তৈরি একটি দ্বিপাখাযুক্ত উড়োজাহাজ, যা ১২ হর্সপাওয়ারের একটি ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হতো। ১৯০৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে, অরভিল রাইট প্রথমবারের মতো উড়োজাহাজটি উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। প্রথম উড্ডয়নটি ১২ সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং মাত্র ১২০ ফুট (৩৭ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করে। তবে, এটিই ছিল মানব ইতিহাসে প্রথম নিয়ন্ত্রিত এবং ইঞ্জিনচালিত উড্ডয়ন। একই দিনে আরও তিনবার উড্ডয়ন করা হয়, এবং চতুর্থ ও শেষবার উইলবার রাইট ৫৯ সেকেন্ড ধরে ৮৫২ ফুট (২৬০ মিটার) দূরত্ব অতিক্রম করেন।
এই সাফল্য শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সূচনা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী পরিবহন ব্যবস্থার এক বিপ্লবের সূচনা করে। পরবর্তী দশকগুলোতে উড়োজাহাজ প্রযুক্তিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ক্ষেত্রে বিমান ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। ১৯২০-৩০ এর দশকে বাণিজ্যিক বিমানযাত্রা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বিশ্ব এক নতুন, দ্রুততর যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়।
আজ, রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সেই ছোট্ট ‘ফ্লায়ার ১’ থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সুপারসনিক বিমান এবং মহাকাশযানের যুগে প্রবেশ করেছে মানবসভ্যতা। কিন্তু সেই প্রথম উড্ডয়নের মাহাত্ম্য আজও অমলিন, যা মানুষকে শিখিয়েছে— আকাশ ছোঁয়া কেবল কল্পনা নয়, বাস্তবতাও হতে পারে।