মানুষের ইতিহাসে জ্ঞান সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হলো বই। তবে আজকের কাগজে ছাপানো বইয়ের ধারণা বহু শতাব্দী আগে ছিল না। তখন পাথর, মাটির ফলক, প্যাপিরাস কিংবা ধাতব পাতায় লেখা হতো বিভিন্ন গ্রন্থ। কিন্তু প্রশ্ন হলো— পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বই কোনটি?
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো "প্রায়ান্স সিলভার রোল", যা খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দীতে লেখা হয়েছিল। এটি একটি ছোট আকৃতির বই, যেখানে পাতাগুলো রূপার তৈরি। বইটিতে প্রাচীন ইট্রুস্কান ভাষায় লেখা কিছু ধর্মীয় মন্ত্র ও আচারবিধি রয়েছে। ১৯৮০ সালে বুলগেরিয়ায় এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় এটি আবিষ্কৃত হয় এবং এখন এটি বুলগেরিয়ার জাতীয় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
এর আগেও অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে, তবে সেগুলো মূলত একক চাদরে লেখা ছিল, যা বইয়ের আকারে বাঁধাই করা হয়নি। এর বিপরীতে প্রায়ান্স সিলভার রোল প্রথম সনাক্তকৃত গ্রন্থ, যা আধুনিক বইয়ের মতো বিভিন্ন পাতায় সংযুক্ত ছিল।
তবে যদি কাগজে লেখা প্রাচীনতম বইয়ের কথা বলা হয়, তাহলে এগিয়ে আসে "ডায়মন্ড সুত্র"। এটি চীনের টাং রাজবংশের সময়, ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ছাপানো হয়েছিল এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম মুদ্রিত বই হিসেবে পরিচিত। এই বইটি মূলত বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা ও দর্শন নিয়ে লেখা এবং এটি কাঠের ব্লক দিয়ে ছাপা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে আধুনিক মুদ্রণশিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে।
এছাড়া মিশরের "ডেড সি স্ক্রলস", যা প্রায় ২২০০ বছর পুরোনো, এবং ভারতের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ "পলম পাতার পাণ্ডুলিপি" (Palm Leaf Manuscripts), যেগুলো খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে লেখা হয়েছিল, সেগুলোও পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম।
প্রাচীন এসব বই শুধু জ্ঞানের ভান্ডার নয়, বরং মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাক্ষী। এগুলো আমাদের জানান দেয়, মানুষ কিভাবে হাজার হাজার বছর ধরে নিজের চিন্তা, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাস সংরক্ষণ করে আসছে। সময় বদলেছে, বইয়ের রূপ বদলেছে, কিন্তু মানুষের জ্ঞানপিপাসা রয়ে গেছে একইরকম।