মানব জিনোম প্রকল্প আমাদের শরীরের জিনগত তথ্য বিশ্লেষণে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল। তবে এবার বিজ্ঞান আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরির গবেষক ড. জুলিয়ান সেলের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে এক নতুন উদ্যোগ—মানব শরীরের জন্য কৃত্রিম ডিএনএ তৈরির কাজ। ড. সেলের মতে, “এই গবেষণা জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় সূচিত করতে যাচ্ছে।”
এ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলকাম ট্রাস্ট। তারা ইতোমধ্যে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। আশাবাদী গবেষকরা বলছেন, বার্ধক্যজনিত রোগ, হৃদরোগ কিংবা লিভার ফেইলিওরের মতো দুরারোগ্য সমস্যা মোকাবেলায় কৃত্রিম ডিএনএ কার্যকর হতে পারে।
এই গবেষণার অন্যতম প্রধান সম্ভাবনা হলো, ভবিষ্যতে কৃত্রিমভাবে এমন কোষ তৈরি করা, যেগুলো মানব শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ বা টিস্যু পুনরুদ্ধারে কাজ করতে পারবে। বিশেষ করে লিভার, হার্ট বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এই প্রযুক্তি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা যতটা আশাবাদী, ততটাই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সমালোচকরাও। প্রযুক্তিটি যদি অসাধু বা বিপজ্জনক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, তাহলে 'উন্নত মানুষ' তৈরির নামে বৈষম্য সৃষ্টি বা জৈব অস্ত্র উৎপাদনের ঝুঁকি রয়েছে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিল আর্নশ বলেছেন, “দৈত্য বোতল থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও ভবিষ্যতে তা আটকানো কঠিন হতে পারে।”
গবেষকরা অবশ্য জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেবল পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ থাকবে। মানবদেহে সরাসরি প্রয়োগ করার পরিকল্পনা নেই। তাদের মূল লক্ষ্য, চিকিৎসা খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন এবং জিনগত রোগের নিরাময়ে কার্যকর সমাধান খোঁজা।
এই গবেষণা ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ধারা বদলে দিতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এর দায়িত্বশীল ও নিরাপদ ব্যবহারে নজরদারি ও নীতিমালার গুরুত্বও বাড়ছে সমানভাবে।