সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ৮:০৪

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে : ড. ইউনূস

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ৫, ২০২৫ ৭:১৭ অপরাহ্ণ
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে : ড. ইউনূস

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার বিচার হবে : ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। শুধু হাসিনা নন, তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীরাও এই বিচারের আওতায় আসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন।

গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। হাসিনার শাসনামলে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে, তার নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশকে ব্যবহার করে শত শত নেতাকর্মীকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার তদারকি করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, গোপন আটক কেন্দ্রগুলোর একটি নেটওয়ার্কের তদারকি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে, যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন এবং হত্যাও করা হতো।

ড. ইউনূস সম্প্রতি “আয়নাঘর” নামে পরিচিত একটি কুখ্যাত গোপন কারাগার পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, “এটিই সবচেয়ে কুৎসিত জিনিস যা আপনি দেখতে পারেন, আপনি অনুভব করতে পারেন বা আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।”

হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশ। ড. ইউনূস জানিয়েছেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে হাসিনাকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন, তবে নয়াদিল্লি থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, হাসিনা অবশ্যই আদালতের মুখোমুখি হবেন, সেটা সশরীরে বাংলাদেশে উপস্থিত থেকে হোক বা অনুপস্থিতিতে, ভারতে থেকেই হোক।

শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশ ছেড়ে পলায়নের পর তার পরিবারের সদস্যসহ অনেকের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ বের হয়ে আসছে এবং দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত চলছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে তাদের একজন ব্রিটিশ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, তিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নী। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলাটি খুবই গুরুতর। দেশে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে এবং সবকিছু খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দল আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক চলছে। ড. ইউনূসের ধারণা, আওয়ামী লীগ একটি দুর্বল ও ব্যর্থ দলে পরিণত হতে পারে। তবে তিনি গুরুত্ব দেন যে তাঁর অন্তর্বর্তী প্রশাসন দলটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, কেননা এটি কোনো ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশটির দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধির পর মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে সহায়তা করার জন্য তারা এখন একটি ‘নিরাপদ অঞ্চলের’ সম্ভাবনা নিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা করছেন।

তিনি বাংলাদেশের কক্সবাজারে বড় সমস্যার কথাও স্বীকার করেছেন। এখানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির রয়েছে এবং সেখানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আনুমানিক ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে এবং সহিংসতা, মাদক এবং আধাসামরিক কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, এই উত্তেজনা ‘হারিয়ে যাবে না’।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রকাশ্যে বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাড়ার পরও সহিংসতা বন্ধ হয়নি এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বাড়েছে।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশে স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা তাদের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ