ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ যতই বাড়ুক, সংকটকালে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার আরও এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি হলো উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে। ২৯ জানুয়ারি পদপিষ্ট হওয়ার পর যখন হাজারো পুণ্যার্থী বিপন্ন হয়ে পড়েন, তখন আশ্রয়ের জন্য মুসলিমরা খুলে দেন মসজিদ, মাদ্রাসা ও ইমামবাড়ার দরজা। অথচ একই সময়ে কুম্ভমেলা চলাকালে মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রাখার অলিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
মানবিকতার অনন্য নজির গড়ে শুধু মসজিদ-মাদ্রাসাই নয়, স্থানীয় মুসলিমরা নিজেদের ঘরবাড়ির দরজাও উন্মুক্ত করে দেন অসহায় পুণ্যার্থীদের জন্য। ক্ষুধার্তদের খাওয়ানোর জন্য রান্না করা হয় নিরামিষ খাবার—পুরি, সবজি, খিচুড়ি, গরম চা। পাশাপাশি কম্বল দেওয়া হয় শীত নিবারণের জন্য।
স্থানীয়দের মতে, এটাই প্রয়াগরাজের চিরন্তন ঐতিহ্য, যা 'গঙ্গা-যামনি তেহজিব' নামে পরিচিত। মুসলিম বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক পরিবেশের মাঝেও এই সহমর্মিতার চিত্র শুধু প্রয়াগরাজেই নয়, কাশ্মীরেও দেখা গেছে। সেখানে বরফে আটকে পড়া একদল পর্যটককে স্থানীয় মুসলিমরা উদ্ধার করে মসজিদে আশ্রয় দেন এবং খাবার-পানীয় সরবরাহ করেন।
২৯ ও ৩০ জানুয়ারি প্রয়াগরাজের বিভিন্ন মসজিদ ও দরগায় হাজারো পুণ্যার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়। খুল্লাবাদ সবজি মন্ডি মসজিদ, বড়া তাজিয়া ইমামবাড়া, হিম্মতগঞ্জ দরগাহ, চক মসজিদ, নখসখোলার হাফিজ রাজ্জাব মসজিদসহ বহু স্থানে শত শত মানুষকে স্থান দেওয়া হয়। রোশনবাগ, রানি মান্ডি, শাহগঞ্জের মুসলিমরা রাজস্থান, তামিলনাড়ু, বিহার, হরিয়ানা থেকে আসা পুণ্যার্থীদের ঘরে তুলে নেন।
শুধু মুসলিমরাই নয়, শিখ সম্প্রদায়ও গুরুদ্বার খুলে দেয় অসহায়দের জন্য। স্থানীয় শিক্ষকদের একজন মাসুদ আহমেদ বলেন, "হিন্দুরা ধর্ম পালনের জন্য এখানে এসেছেন, আর আমরা মানবধর্ম পালন করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।"
বাসিন্দা মইনুদ্দিনের কথা, "মানুষের বিপদে মানুষই এগিয়ে আসে—এটাই আমরা শিখেছি।" মাহমুদ আজমের মন্তব্য, "মেলাপ্রাঙ্গণের কাছাকাছি মুসলমানদের না যাওয়ার জন্য প্রচার করা হয়েছিল, অথচ বিপদের সময় মেলাই চলে এলো মুসলিম মহল্লায়!"
এটাই প্রকৃত মানবতা, যা ধর্ম ও বিভেদের ঊর্ধ্বে।