মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম: কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা
অ্যানিউরিজমের কারণ
মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম সাধারণত বংশগত প্রভাব, উচ্চ রক্তচাপ, মাথায় গুরুতর আঘাত এবং ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি জন্মগতভাবেও থাকতে পারে।
লক্ষণ যেভাবে প্রকাশ পায়
অ্যানিউরিজম যতক্ষণ না ফেটে যায়, ততক্ষণ সাধারণত কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এজন্য প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা কঠিন। অনেক সময় অন্য কোনো কারণে মস্তিষ্কের পরীক্ষা করতে গিয়ে এটি ধরা পড়ে। তবে অ্যানিউরিজম ফেটে গেলে কিছু উপসর্গ হঠাৎ করেই দেখা দেয়, যেমন—
- হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- বমি বমি ভাব
- চোখের পেছনে বা আশপাশে ব্যথা
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা দ্বিগুণ দেখা
- মুখের এক পাশে অবশ ভাব বা অসাড়তা
অ্যানিউরিজম ফেটে গেলে সাব-অ্যারাকনয়েড হেমোরেজ (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) হতে পারে। এমন রোগীদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে প্রায় তিনজনই দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।
রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি
অ্যানিউরিজম শনাক্ত করতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হলো এনজিওগ্রাম। এতে পায়ের রক্তনালির মাধ্যমে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে তা মস্তিষ্কে পৌঁছানো হয় এবং রক্তনালিগুলো দেখা হয় কনট্রাস্ট ডাইয়ের মাধ্যমে। এছাড়া এমআরআই, সিটি স্ক্যান এবং সিএসএফ পরীক্ষাও অ্যানিউরিজম নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
মস্তিষ্কে অ্যানিউরিজম থেকে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কেবল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব। দুটি প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে:
১. এন্ডোভাসকুলার কোয়েলিং: রোগীর কুঁচকি দিয়ে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে ফোলা ধমনির স্থানে প্লাটিনামের তৈরি সূক্ষ্ম প্যাঁচানো তার (কয়েল) ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে সেখানে আর রক্ত প্রবেশ না করে।
২. ক্র্যানিয়োটমি বা ওপেন সার্জারি: মস্তিষ্কে সরাসরি অস্ত্রোপচার করে অ্যানিউরিজমের নিচে টাইটানের তৈরি একটি ক্লিপ লাগানো হয়, যাতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং অ্যানিউরিজমটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
উভয় পদ্ধতিতেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়, কারণ সামান্য ভুলও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।