গেল বছর হামাসের অপারেশন আল আকসা ফ্লাডকে অজুহাত বানিয়ে গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ অভিযান চালায় দখলদার ইসরায়েল। সীমান্তবর্তী লেবাননেও নির্বিচার হামলা চালায় তেলআবিব। এবার সিরিয়ার আসাদ সরকারের পতনের পর দেশটির সামরিক শক্তিকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। ইসরায়েলের দাবি, তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর আড়ালে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে এক ভয়ংকর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।
ইসরায়েলি বাহিনীর সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল এবং সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালানোর ঘটনা নতুন নয়। ২০১৩ সাল থেকেই হিজবুল্লাহ ও ইরানের সামরিক কার্যক্রম দমনের নামে সিরিয়ায় হামলা চালিয়ে আসছে তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ধরনের আগ্রাসনকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে তেলআবিব, আর আত্মরক্ষার অজুহাতে নিজেদের কর্মকাণ্ড বৈধ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরান, হিজবুল্লাহ ও হামাসের ওপর ইসরায়েলি হামলার কারণেই আসাদ সরকারের পতন হয়েছে। তার এমন বক্তব্যের পর বিশ্লেষকরা বলছেন, গোলান মালভূমিতে দখলদারিত্বের মাধ্যমে ইসরায়েল বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ওরি গোল্ডবার্গ মনে করেন, ইসরায়েলের বর্তমান নিরাপত্তা নীতিমালা তাদের যে কোনো স্থানে এবং সময়ে হামলার সুযোগ দিচ্ছে। এই নীতির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোতে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করতে চাইছে তারা। তবে গোল্ডবার্গের মতে, এসব কর্মকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের চলমান বিশৃঙ্খলার প্রতিফলন এবং ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক মানসিকতার ফলাফল।
থিংক ট্যাংক ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক মাইরাভ জোন্সজিন বলেন, ইসরায়েলের এমন আগ্রাসন মূলত সুযোগ ও কৌশলের সমন্বয়। তারা সীমান্তে যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে চায়। যদিও এ ধরনের হুমকি বাস্তবিক অর্থে তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। তার মতে, এটি ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের গ্রহণ করা নতুন কৌশলের অংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহু বহুবার মধ্যপ্রাচ্যকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনার কথা বলেছেন। সিরিয়া ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সেই পরিকল্পনারই ধারাবাহিকতা। এর মাধ্যমে দেশটি আরও আগ্রাসী দখলদারিত্বের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।