© saam sadi, 06-04-2025
গত শতাব্দীর মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস যদি টলস্টয়ের "ওয়ার অ্যান্ড পিস" -এর মতো মহাকাব্যিক হতো, তাহলে তার নায়কেরা হতেন না কোনো নীতিবান যোদ্ধা, বরং ম্যাকিয়াভেলির "দ্য প্রিন্স" -এর আদলে গড়া একদল ক্ষমতালোভী চরিত্র—যারা মানচিত্রকে ছিন্নভিন্ন করে, তেলের নেশায় মত্ত হয়ে, আর বৈশ্বিক সার্কাসে "শান্তির কপট নাচ" চালিয়েছে। এই নাটকের মঞ্চসজ্জায় ব্রিটিশ ও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ "গেম অব থ্রোনস" -এর ল্যানিস্টারদের মতো বলতে থাকে: "যুদ্ধে জিততে হলে ঋণ শোধের হিসাব নয়, বরং আগুনের ভাষা শেখো।"
সাইকস-পিকট থেকে বালফোর—একটি ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রাষ্ট্রের জন্ম
১৯১৬ সালের "সাইকস-পিকট চুক্তি" ছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হাতে মধ্যপ্রাচ্যকে কাটাছেঁড়া করার ছুরি। এরপর ১৯১৭ সালের "বালফোর ডিক্লারেশন"—যেখানে ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের "জাতীয় আবাস" ঘোষণা করে ব্রিটিশরা এমন এক বীজ বপন করল, যা আজ "গাজায় ফসল হয়েছে রক্তের"। কিন্তু এর পেছনে আল সৌদ পরিবারের ভূমিকা? তারা ছিলেন লর্ড কার্জনের "গ্রেট গেম"-এর স্থানীয় অংশীদার—যেন শেকসপিয়রের "ম্যাকবেথ" নাটকের তিন ডাকিনী, যারা ভবিষ্যদ্বাণী করে বলল: "ইসরায়েল গড়ো, তেলের ঝুড়ি চিরস্থায়ী হবে।"
- সৌদি-মার্কিন জোট হলো "ফাউস্টের চুক্তি"—আত্মা (ফিলিস্তিন) বিকিয়ে দেওয়া হয়েছে শয়তানের (তেলের লোভ) কাছে।
- "ড্রিল বেবি ড্রিল!"—মার্কিন প্রেসিডেন্টদের স্লোগান যেন সৌদিদের কানে পৌঁছায় "তেলের ফোয়ারা" হিসাবে, আর ফিলিস্তিনিদের কানে পৌঁছায় "অশ্রুর নদী" হিসাবে।
মিশর: ক্যাম্প ডেভিডের 'জুডাস কিস'
১৯৭৮ সালের "ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি"-তে মিশর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিণত হলো "আমেরিকার মধ্যপ্রাচীয় "গেটকিপার"-এ। আনোয়ার সাদাতের সেই চুক্তি ছিল "হোমারের ট্রোজান হর্স"-এর মতো—বাহ্যিকভাবে "শান্তি", অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশ্বাসঘাতকতার বিষ। গাজার সীমান্তে মিশরের ভূমিকা? "প্রহরী নয়, কারাগারের দ্বাররক্ষী"।
- মিশরের নীতিনির্ধারকরা "ইদিপাস কমপ্লেক্সে" আক্রান্ত—নিজের চোখেই অন্ধ, নিজের হাতেই নিজের রাজনৈতিক ভাগ্য খুন করছে।
- টলস্টয়ের "আন্না কারেনিনা" "সব সুখী পরিবার একই রকম, কিন্তু প্রতিটি অসম্মানজনক চুক্তি নিজস্ব নোংরামিতে অনন্য।"
ইরান: 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স' নাকি 'অ্যাক্সিস অব অপারচুনিজম'?
ইরানের নেতারা যখন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে "মুক্তির জিহাদ"ডাক দেন, তখন তা শুনতে "অরওয়েলের "1984"-এর "ডাবলথিংক"-এর মতো—"যুদ্ধই শান্তি, দাসত্বই মুক্তি।" ইরান-ইরাক যুদ্ধে আমেরিকার সমর্থনপ্রাপ্ত সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই, আর আজ হামাসকে অস্ত্র দেওয়া—দুটোই একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এখানে ফিলিস্তিনিরা "পারস্যের দাবাখেলার বোড়ে, যাদের বলি দেওয়া হয় "শিয়া-সুন্নি প্রোক্সি যুদ্ধের" বোর্ডে।
- ইরানের নীতিনির্ধারকরা "কাফকার দ্য মেটামরফোসিস"-এর গ্রেগর সামসা—আত্মপরিচয় হারিয়ে রাজনৈতিক পোকায় পরিণত।
- ইরানের "প্রতিরোধ" নীতি হলো "হলিউডের স্পেশাল ইফেক্টস"—বাহ্যিক ঝলক অনেক, অন্তরে ফাঁপা।
আমেরিকা: সার্কাসের রিংমাস্টার ও 'ব্লাড-ডায়মন্ড' কূটনীতি
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি হলো "জোসেফ কনরাডের "হার্ট অব ডার্কনেস"-এর কুর্টজ—"ভয়, ভয়!" চিৎকার করতে করতে নৈতিকতার গহ্বরে পতিত। ১৯৫৩-এ ইরানের মোসাদ্দেককে উৎখাত, ২০০৩-এ ইরাক আক্রমণ, আর আজ নেতানিয়াহুকে "আত্মরক্ষার অধিকার" দেওয়া—এসবই "প্যাক্স আমেরিকানা" নামক সাম্রাজ্যের "ব্লাড-ডায়মন্ড" (রক্তের হীরে), যা পাল্টা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে।
- মার্কিন কংগ্রেস ইসরায়েলকে যে অস্ত্র দেয়, তা "দ্য হাঙ্গার গেমস"-এর চিরন্তন ট্রিবিউট—ফিলিস্তিনিরা হলো ডিস্ট্রিক্ট ১২, যাদের বলি হতে হয় ক্ষমতার ক্রীড়ার জন্য।
- 'মার্ক টোয়েনের' বিখ্যাত উক্তি: "ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে না, কিন্তু তা প্রায়শই ছন্দ মেলায়।" গাজায় আজ যা হচ্ছে, তা ১৯৪৮ সালের নকবা (বিপর্যয়) থেকে "ব্ল্যাক মিরর" এপিসোডের মতো ভয়ংকর পুনরাবৃত্তি।
'হাউজ অব কার্ডস' থেকে 'হাউজ অব স্যান্ড'
এই মহাকাব্যের শেষ অধ্যায় এখনো অলিখিত, কিন্তু এর গতিপথ 'শেকসপিয়রের "টেমপেস্ট"-এর মতো—যেখানে কলোনাইজার (ব্রিটেন/আমেরিকা) নিজের তৈরি ঝড়ে নিজেই আটকে যায়। ক্ষমতার এই সার্কাসে দর্শকরা (বিশ্ববাসী) যদি শুধু পপকর্ন খেয়ে হাসতে থাকে, তাহলে মঞ্চের পিছনের "গ্রিন জোন" (তেলের মজুদ) কখনোই জনগণের জন্য উন্মুক্ত হবে না।
- ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব হলো "সিজিফাসের শাস্তি"—শান্তির পাথর গড়িয়ে যায়, আবার ফিরে আসে যুদ্ধের গহ্বরে।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের "মানবাধিকার" বক্তৃতাগুলো "দ্য এম্পেরর’স নিউ ক্লোথস"-এর শিশুটির চিৎকার—সবাই জানে সত্য, কিন্তু কেউ মুখ খোলে না।
এই মহাকাব্য কি শেষ হবে "লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ"-এর মতো—যেখানে ক্ষমতালোভী শিশুরা দ্বীপে (গাজা) লাশের স্তূপ ফেলে? নাকি "দ্য লর্ড অব দ্য রিংস"-এর মতো—যেখানে সাধারণ মানুষ (বিশ্ব নাগরিক) সার্কাসের পর্দা ছিঁড়ে "নো মোর!" বলে প্রতিবাদে নামবে?
উত্তরটা সময়ের হাতেই নয়—আপনার হাতেও।