মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| সকাল ৯:২০

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য উত্তেজনা ও কালাদান প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্ব

প্রতিবেদক
staffreporter
মে ২৬, ২০২৫ ৮:৫৫ অপরাহ্ণ
ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য উত্তেজনা ও কালাদান প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্ব

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য উত্তেজনা ও কালাদান প্রকল্পের কৌশলগত গুরুত্ব

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে ভারত বাংলাদেশের পণ্য আমদানির উপর নতুন করে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকালে ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে দেওয়া মন্তব্য এই পদক্ষেপের অন্যতম কারণ। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যকে ‘ল্যান্ড লকড’ বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশকে তাদের সমুদ্রগামী ‘গার্জিয়ান’ হিসেবে উল্লেখ করেন ইউনূস। ভারতের দৃষ্টিতে এই মন্তব্য কূটনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর।

শেখ হাসিনার সরকার বিদায়ের পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে দৃশ্যত ঠান্ডাভাব দেখা দিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সৌজন্য বিনিময় এবং ব্যাংককে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরও বরফ গলছে না। উভয় দেশই সীমান্ত বাণিজ্যে নানা বাধা আরোপ করেছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে কড়াকড়ি। এই অঞ্চল বাংলাদেশের পণ্যের বড় বাজার, বিশেষ করে পোশাক, প্লাস্টিক ও খাদ্যপণ্যের। ভারত এখন সেই বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশ ঠেকাতে চায়।

এই পরিস্থিতির পেছনে কেবল বাণিজ্যিক নয়, কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক ভাবনাও কাজ করছে। ভারতের ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডোর – একটি মাত্র ভূখণ্ড যার মাধ্যমে ভারতের মূলভূমির সঙ্গে উত্তর-পূর্বের সংযোগ – অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই করিডোরে সমস্যা হলে উত্তর-পূর্ব ভারত কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ফলে, বিকল্প পথের সন্ধানে ভারত অনেকদিন ধরেই কাজ করছে।

এই প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে ‘কালাদান প্রকল্প’। এটি একটি হাইব্রিড ট্রান্সপোর্ট করিডোর যা কলকাতা বন্দর থেকে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর, সেখান থেকে পালেতওয়া পর্যন্ত নদীপথ এবং এরপর মিজোরাম হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বে প্রবেশ করে। এই রুটটি বাংলাদেশকে বাইপাস করে বিকল্প সংযোগ তৈরি করছে ভারতের মূলভূমি ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে। ভারত চাইছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্যবসায়ীরা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারে আরও সক্রিয় হোক এবং বাংলাদেশের ভূগোলের উপর নির্ভরতা কমানো হোক।

তবে এই কালাদান প্রকল্প নতুন নয়। অনেক আগেই মিয়ানমারের সাথে চুক্তির মাধ্যমে কাজ শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যের সিতওয়ে বন্দরে বিপুল বিনিয়োগ করে ভারত। কিন্তু বর্তমানে মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সেনা জুন্টার শাসন ও আরাকান আর্মির দখলদারি প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিতওয়ের আশপাশে ভারতীয় শ্রমিকদের উপর হামলা হয়েছে এবং অনেককে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এর বাইরে ভারত তৃতীয় একটি বিকল্প পথও বিবেচনায় রেখেছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে কলকাতা ও আগরতলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ তৈরি হওয়ার কথা ছিল। হাসিনা সরকারের সময় এই রেলপথের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বর্তমানে তা স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে, এখন কার্যত ভারতের হাতে একমাত্র ভরসা কালাদান প্রকল্পই, যদিও তা নিরাপত্তাজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ।

সামরিক বিশেষজ্ঞ কর্নেল শান্তনু রায় মনে করছেন, ভারতের বর্তমান অবস্থায় কৌশলগত ও বাণিজ্যিক দিক থেকে চিকেনস নেকের বিকল্প তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। ভারত চেষ্টা করছে উত্তর-পূর্বকে বাংলাদেশ ছাড়াও নিজস্ব সমুদ্র ও ভূখণ্ডগত উপায়ে যুক্ত রাখার, যাতে রাজনৈতিক সম্পর্কের ওঠানামার প্রভাব বাণিজ্যিক প্রবাহে না পড়ে।

বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি স্পর্শকাতর পর্যায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য সেই সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের কৌশলগত উদ্যোগগুলো, বিশেষ করে কালাদান প্রকল্প, তাদের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যনীতির দিক নির্দেশ করছে—যার কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ভূমিকা ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বায়ত্তশাসিত বাণিজ্যিক প্রবাহ নিশ্চিত করার প্রয়াস।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
অর্থপাচার রোধে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি টিআইবিসহ তিন সংস্থার আহ্বান

কালো টাকা সাদা করার সুযোগে টিআইবির নিন্দা, সিদ্ধান্তকে বলা হয়েছে দুর্নীতিবান্ধব ও সংবিধানবিরোধী

অপতথ্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

অপতথ্য মোকাবিলা ও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প

রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতি: এপ্রিল মাসে এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার

রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বগতি: এপ্রিল মাসে এসেছে ২৭৫ কোটি ডলার

সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘সরাসরি যোগাযোগ’ যুক্তরাষ্ট্রের

ইআরএফের সুপারিশ: বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হোক

ইআরএফের সুপারিশ: বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হোক

রায়পুরে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার

রায়পুরে বিএনপির ১৬ নেতাকর্মীকে আজীবন বহিষ্কার

৭ দিনের মধ্যে মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার শুরু হবে

৭ দিনের মধ্যে মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার শুরু হবে

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রধান উপদেষ্টার জোরালো নির্দেশ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রধান উপদেষ্টার জোরালো নির্দেশ

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে উপদেষ্টাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে উপদেষ্টাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ