বিশ্বখ্যাত বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা অবশেষে ভারতের বাজারে প্রবেশের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে একাধিক পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এটি এমন এক সময়ে করা হলো, যখন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে টেসলার ভারতে কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা থাকলেও বিভিন্ন নীতি ও শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তবে মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর দ্রুততার সঙ্গে টেসলা জনবল নিয়োগ শুরু করায় অনেকে মনে করছেন, মাস্ক কেবল বাণিজ্যিক স্বার্থেই নন, বরং মার্কিন সরকারের স্বার্থেও কাজ করছেন।
টেসলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এবং পেশাদারদের জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক লিঙ্কডইনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে স্টোর ম্যানেজার, টেকনিশিয়ানসহ একাধিক পদের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে ভারতের বাজারে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে, ২০২৩ সালে টেসলা ভারতের বিভিন্ন স্থানে কারখানা ও শোরুম স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজছিল, যা এখন বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।
টেসলা শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারেই নয়, বরং ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা খাতে প্রবেশের পরিকল্পনাও করছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন Starlink ইন্টারনেট সেবা ভারতে চালুর জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তাবিধি মেনে চললে স্টারলিঙ্ক ভারতে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাবে। ফলে টেসলার এন্ট্রির মাধ্যমে স্টারলিঙ্ক প্রকল্পও নতুন গতি পেতে পারে।
২০২৪ সালে ইলন মাস্কের ভারত সফরের পরিকল্পনা ছিল, যেখানে তিনি বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দিতে পারতেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করে তিনি ভারতীয় বিধিবিধানকে প্রতিকূল বলে উল্লেখ করেন। তবে সাম্প্রতিক পদক্ষেপে স্পষ্ট, টেসলা এখন ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার তুলনামূলক ছোট হলেও, এটি একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। তবে চীনা কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতার কারণে ভারতীয় ইভি (EV) বাজার বর্তমানে চাপে রয়েছে। পাশাপাশি বার্ষিক বিক্রি আশানুরূপ না হওয়ায় এই খাত কিছুটা মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু টেসলার মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ভারতে কার্যক্রম শুরু করলে, তা দেশটির বৈদ্যুতিক গাড়ির শিল্পে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ ভারতের বাজার দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে টেসলা। তবে এই দেরির পেছনে ভারতের কঠোর আমদানি শুল্ক এবং স্থানীয় উৎপাদন বাধ্যবাধকতাসহ নীতিগত জটিলতাই মূল কারণ ছিল। টেসলার বাজারে প্রবেশের ফলে ভারতীয় ইভি শিল্প নতুন গতি পাবে, পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি