মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫| ভোর ৫:৪৬

ভারতের ঝাড়খণ্ডে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ, নিহত ৮

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ২২, ২০২৫ ৯:২২ অপরাহ্ণ
ভারতের ঝাড়খণ্ডে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ, নিহত ৮

ভারতের ঝাড়খণ্ডে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষ, নিহত ৮

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে ঝাড়খণ্ড পুলিশ জানিয়েছে। সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।

সংঘর্ষের বিবরণ
ঝাড়খণ্ড পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সুরেন্দ্র কুমার ঝা জানান, সোমবার ভোরে বোকারো জেলার একটি বনাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘর্ষে ৮ জন মাওবাদী নিহত হন। সংঘর্ষস্থলে অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। তবে, এই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ঝাড়খণ্ডের খনিজ-সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটি মাওবাদীদের কার্যক্রমের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে।

মাওবাদী বিদ্রোহের প্রেক্ষাপট
মাওবাদী বিদ্রোহ, যা নকশাল আন্দোলন নামেও পরিচিত, ভারতের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে চলছে। ১৯৬৭ সালে চীনা বিপ্লবী নেতা মাও সেতুংয়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়। মাওবাদীরা দাবি করে, তারা আদিবাসী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জমি, চাকরি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে।

ভারতের ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলোতে মাওবাদীদের কার্যক্রম বেশি সক্রিয়। এই অঞ্চলগুলোকে একসঙ্গে “রেড করিডোর” নামে অভিহিত করা হয়। এই বিদ্রোহের কারণে গত কয়েক দশকে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী, মাওবাদী যোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিকরা রয়েছেন।

২০০০-এর দশকের শুরুতে মাওবাদী আন্দোলন ব্যাপকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময়ে তারা ব্যাপক জনবল সংগ্রহ করে এবং সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের হামলা চালায়। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযান এবং সরকারের নীতির কারণে মাওবাদীদের প্রভাব কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

সরকারের অবস্থান ও অভিযান
ভারত সরকার মাওবাদী বিদ্রোহকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। নয়াদিল্লি রেড করিডোরে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে এবং মাওবাদীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। গত বছর ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রায় এক হাজার সন্দেহভাজন মাওবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ৮৩৭ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৪০০-এর বেশি মাওবাদী যোদ্ধা নিহত হয়েছে।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর সেপ্টেম্বরে মাওবাদীদের “আত্মসমর্পণ বা সর্বাত্মক হামলার” মুখোমুখি হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার ২০২৬ সালের শুরুর দিকে মাওবাদী বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে দমন করতে চায়।

মাওবাদীদের কৌশল ও সরকারি বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি
মাওবাদীরা প্রায়শই গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা রাস্তার পাশে বোমা পুঁতে হামলা চালায়, যা নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে মাওবাদীদের পুঁতে রাখা একটি বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। এই ধরনের হামলা সরকারি বাহিনীকে বারবার ক্ষয়ক্ষতির মুখে ফেলেছে।

অন্যদিকে, মাওবাদীরাও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারের কঠোর নীতি এবং আত্মসমর্পণের জন্য প্রণোদনার কারণে অনেক মাওবাদী যোদ্ধা তাদের অস্ত্র ত্যাগ করছে। তবে, এই অঞ্চলে সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মাওবাদী বিদ্রোহের তাৎপর্য
মাওবাদী আন্দোলন ভারতের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি প্রতিফলন। খনিজ-সমৃদ্ধ এই অঞ্চলগুলোতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে তাদের জমি, সম্পদ এবং অধিকার থেকে বঞ্চিত। মাওবাদীরা এই জনগোষ্ঠীর অসন্তোষকে পুঁজি করে তাদের আন্দোলনকে জনপ্রিয় করেছে। তবে, তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম এবং সরকারি বাহিনীর কঠোর প্রতিক্রিয়া এই অঞ্চলে সহিংসতার চক্রকে আরও জটিল করে তুলেছে।

ভারত সরকার মাওবাদী বিদ্রোহ দমনের পাশাপাশি এই অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্ক্রিনিং, শিক্ষা, এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে সরকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করছে। তবে, মাওবাদীদের প্রভাব এখনো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ঝাড়খণ্ডে সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ মাওবাদী বিদ্রোহ এবং সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান উত্তেজনার একটি প্রতিফলন। সরকার ২০২৬ সালের মধ্যে এই বিদ্রোহ সম্পূর্ণভাবে দমন করার লক্ষ্য নিলেও, এই লক্ষ্য অর্জনের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। মাওবাদীদের গেরিলা কৌশল, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভৌগোলিক জটিলতা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের সমর্থন এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই সংঘাতের সমাধানে সামরিক অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য জমি অধিকার, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে মাওবাদীদের সমর্থন ভিত্তি দুর্বল হতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার দাবি রাখে।

সূত্র: এএফপি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত

ফরাসি পার্লামেন্টে আস্থাভোটে সরকারের পতন

আইন উপদেষ্টা: ধর্ষণের মামলার তদন্ত ১৫ দিনে ও বিচার ৯০ দিনের মধ্যে হবে

আইন উপদেষ্টা: ধর্ষণের মামলার তদন্ত ১৫ দিনে ও বিচার ৯০ দিনের মধ্যে হবে

বহিরাগত থেকে শীর্ষে: আনুশকা শর্মার বলিউড যাত্রা এখনও প্রাসঙ্গিক

বহিরাগত থেকে শীর্ষে: আনুশকা শর্মার বলিউড যাত্রা এখনও প্রাসঙ্গিক

পানির ট্যাংকে লুকিয়েও রেহাই পেলেন না আ. লীগ নেত্রী কাবেরী

পানির ট্যাংকে লুকিয়েও রেহাই পেলেন না আ. লীগ নেত্রী কাবেরী

স্কয়ার টয়লেট্রিজে অফিসার (সেলস অপারেশন) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পিএলসি-তে চাকরির সুযোগ

এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করল কানাডা

এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করল কানাডা

ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে প্রেম, ব্রেকআপ ও অনুশোচনার গল্পে মুখ খুললেন বিবেক ওবেরয়

ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে প্রেম, ব্রেকআপ ও অনুশোচনার গল্পে মুখ খুললেন বিবেক ওবেরয়

বাংলাদেশ বিমান একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বাংলাদেশ বিমান একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

আজকের নামাজের সময়সূচি (৩০ জুন, ২০২৫)

আজকের নামাজের সময়সূচি (৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)

দেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান: মির্জা ফখরুল