ভবিষ্যতের শক্তি হবে এআই জ্ঞানে, বললেন গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও

গুগল ডিপমাইন্ডের সিইও ডেমিস হাসাবিস এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি চাকরির জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। তার মতে, কিছু পুরোনো চাকরি হারিয়ে যাবে, কিন্তু সেগুলোর জায়গায় তৈরি হবে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের পেশা। এ কারণে কিশোর-কিশোরীদের এখন থেকেই এআই শেখা শুরু করা উচিত। যাঁরা প্রযুক্তি বোঝেন এবং তা ব্যবহার করতে পারেন, ভবিষ্যতে তারাই এগিয়ে থাকবেন।

হাসাবিস মনে করেন, বিভিন্ন যুগে প্রযুক্তি মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। যেমন ইন্টারনেট বদলে দিয়েছিল মিলেনিয়াল প্রজন্মের জীবনধারা, আর স্মার্টফোন বদলে দিয়েছে জেনারেশন জেড বা জেন-জেডের জীবনযাত্রা। এখনকার শিশুরা—অর্থাৎ জেনারেশন আলফার জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে এআই। তাঁর ভাষায়, “যারা এখন থেকেই এআই শিখবে, ব্যবহার শিখবে এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে, তারাই হবে ভবিষ্যতের বিজয়ী।”

২০২২ সালে ওপেনএআই-এর তৈরি চ্যাটজিপিটি চালুর পর থেকে এআই নিয়ে সারা বিশ্বেই ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। শুধু প্রযুক্তি পেশাজীবী নয়, সাধারণ চাকরিজীবী ও উদ্যোক্তারাও ভাবছেন, এআই তাঁদের কাজ কেড়ে নেবে কি না। হাসাবিস বলেন, “হ্যাঁ, কিছু চাকরি হয়তো হারিয়ে যাবে। তবে তার মানে এই নয় যে কাজই থাকবে না। বরং নতুন বাস্তবতায় তৈরি হবে একেবারে নতুন ধরনের পেশা।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একসময় সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ইউএক্স ডিজাইনার বা ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ার বলে কোনো পেশাই ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের কাজের চাহিদা বেড়েছে। ঠিক তেমনি, এআই ঘিরেও এমন সব পেশার জন্ম হবে, যেগুলোর নামও আমরা এখন জানি না। তাই যারা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে, শিখতে আগ্রহী হবে এবং সৃজনশীলভাবে কাজ করবে, তারাই সফল হবে।

তবে প্রযুক্তি শেখাকে শুধু সফটওয়্যার ব্যবহারে সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন গভীরভাবে বোঝার ওপর। যেমন, শুধু গুগল ব্যবহার জানলেই হবে না—বুঝতে হবে গুগল কীভাবে কাজ করে। এজন্যই তিনি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) শিক্ষার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি শেখার আগ্রহ, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সৃজনশীলতা এবং বিশ্লেষণধর্মী চিন্তা-ভাবনাকে ভবিষ্যতের সফট স্কিল হিসেবে দেখেন।

হাসাবিস বলেন, ভবিষ্যতের অনেক কাজ মেশিন বা রোবট করে ফেলবে। কিন্তু যে কাজগুলোতে মানবিক বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা প্রয়োজন, সেখানে মানুষেরই আধিপত্য থাকবে। এজন্য প্রয়োজন হবে শিক্ষা, দক্ষতা এবং পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর মানসিকতা।

তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কেবল পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। এখনই সময় প্রযুক্তিকে জানার, ভুল করার, আবার শেখার। এই সময়কে কাজে লাগাতে হবে। তাঁর পরামর্শ হলো—ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্মে কাজ করা, এআই ল্যাবে সময় কাটানো, অনলাইনে ফ্রি কোর্স করা এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানে অভ্যাস তৈরি করা।

হাসাবিস বলেন, “শুধু কঠিন টেকনিক্যাল জ্ঞানই যথেষ্ট নয়। নিজের মানসিকতা বদলাতে পারার শক্তিও থাকতে হবে।” তিনি মনে করেন, মানুষের আসল শক্তি তার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। যে নিজেকে বদলাতে পারবে, সেই টিকে থাকবে। তাঁর মতে, “এআই কেবল ভবিষ্যৎ নয়—এটি এখনকার বাস্তবতা। সময় চলে যাচ্ছে। এখনই এআই শেখার সেরা সময়। যার হাতে থাকবে এআই জ্ঞান, তার হাতেই থাকবে আগামী দিনের শক্তি।”

ডেমিস হাসাবিসের এই বক্তব্য তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা—এআইকে ভয় নয়, বরং বুঝে ও শেখার মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে।