ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনকে নিয়ে গঠিত ব্রিকসের সাম্প্রতিক সম্মেলনে মার্কিন শুল্কনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়া হয়েছে। ব্রিকসের লিখিত সিদ্ধান্তে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, তারা ট্রাম্প সরকারের নতুন শুল্কনীতিকে সমর্থন করে না। এই ঘোষণা দেওয়ার কিছু সময় পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যারা আমেরিকার শুল্কনীতির বিরোধিতা করবে তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারসাম্য বজায় রেখে আসছে। রাশিয়া ও আমেরিকার পাশাপাশি ব্রিকসে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ব্রিকসের এই সম্মেলনে পহেলগাম-কাণ্ডের উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা সাফল্য পেয়েছে, যা বিশেষজ্ঞরা দেশের কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক অনিন্দ্যজ্যোতি মজুমদার বলেন, সাংহাই কোঅপারেশনের সঙ্গে ব্রিকসের মঞ্চ আলাদা এবং ব্রিকসে পহেলগাম-কাণ্ডের উল্লেখ ভূরাজনীতিতে তেমন কোনো বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে এটি ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি বিশ্লেষক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।
কূটনৈতিক ভাষ্যকার প্রণয় শর্মা ব্রিকসের সিদ্ধান্তকে ভারতের ভূরাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে মূল্যায়ন করেন এবং মনে করেন, গ্লোবাল সাউথের শক্তিশালী মঞ্চ হিসেবে ব্রিকসের গুরুত্ব বাড়ছে, যেখানে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ব্রিকসের বিরোধিতার জবাবে ট্রাম্পের হুমকি এবং শুল্কনীতি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলমান রয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে শুল্ক নীতি থেকে মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কৃষির বদলে অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এই মূহুর্তে শুল্কনীতি আরও কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও ব্রিকসে চীনের অবস্থানের কারণে ভারত সরাসরি ব্রিকসের বিরোধিতার পথে যেতে পারবে না। পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টায় ভারত আরও জটিল কূটনৈতিক অবস্থায় রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, ব্রিকস সম্মেলনে ভারতের পহেলগাম-কাণ্ড উল্লেখ একটি কূটনৈতিক সাফল্য হলেও, এর ভূরাজনৈতিক প্রভাব সীমিত হবে এবং শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আরও জটিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও হুমকি কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিকসের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনার চিত্র স্পষ্ট।
শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের মানসিক যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সমঝোতার পথে অগ্রগতি কিছুটা আশা জাগাচ্ছে।
সুত্র: বিভিন্ন সংবাদ ও বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ।