আজ ১৫ জুন, বিশ্ব বায়ু দিবস। প্রতি বছরের মতো সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হচ্ছে বায়ুর গুরুত্ব এবং এর ব্যবহারিক শক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। বিশেষত বায়ুশক্তিকে নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা ও কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে এই দিনটি উদযাপিত হয়। দিবসটি পালনের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো এই শক্তির ব্যবহারে বিশ্ব কোথায় এগিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করা।
২০০৭ সালের ১৫ জুন প্রথমবার ‘বায়ু দিবস’ হিসেবে এই দিনটি পালিত হয়। এরপর ২০০৯ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বিশ্ব বায়ু দিবস’। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বায়ুশক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে এটি শুরু হয়। উইন্ডইউরোপ নামের সংস্থা জানিয়েছে, উপকূলীয় অঞ্চলের বাতাস থেকে পাওয়া শক্তিই এখন ইউরোপের সবচেয়ে সস্তা শক্তির উৎস। বর্তমানে বিশাল উইন্ড টারবাইনের মাধ্যমে বাতাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশেই। এমনকি ভারতেও বায়ুশক্তি ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে অন্যদিকে, বায়ু দূষণ বিশ্বজুড়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (EPIC) গবেষণা অনুযায়ী, বায়ুদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ দেশের মধ্যে চারটি রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। তাদের তথ্যে উঠে এসেছে— সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার বাংলাদেশ, যেখানে বায়ুদূষণের কারণে গড়ে ৭ বছর আয়ু কমে যাচ্ছে মানুষের। রাজধানী ঢাকায় এ হার প্রায় ৮ বছর, আর চট্টগ্রামে গড়ে সাড়ে ছয় বছর।
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার সব কটিতেই বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ WHO-এর সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা ও ঘনত্ব বেশি হওয়ায়, বায়ুদূষণের কারণে আয়ু হ্রাসের বৈশ্বিক গড়ের ৫২ শতাংশ এ অঞ্চলেই ঘটছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ৯৭ শতাংশ মানুষ এমন এলাকায় বসবাস করছে, যেখানে বায়ুদূষণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। ধূমপান, এইডস বা সন্ত্রাসী হামলার চেয়ে বায়ুদূষণই বেশি হারে মানুষের আয়ু হ্রাস করছে।
বাংলাদেশ সরকার ইটভাটাগুলোর দূষণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকার ৬০ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এই ইটভাটাগুলো। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ইটের বদলে কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে, যা বায়ু রক্ষা এবং মাটির ওপরিভাগ সংরক্ষণের জন্য সহায়ক হবে।
এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা জানিয়েছে, পৃথিবীর অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক শক্তি হলো বায়ুশক্তি। প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বায়ুর অবদান অপরিহার্য। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বায়ুশক্তিকে ব্যবহার করে আসছে। যেমন, মিশরের নীল নদে নৌকা চালাতে বায়ুকলের ব্যবহার এবং চীনে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে বায়ুচালিত জলের পাম্প আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে আলেকজান্দ্রিয়ার হেরন নির্মাণ করেন বিশ্বের প্রথম উইন্ডহুইল— যা পরবর্তীতে সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পায়। ১৮০০ ও ১৯০০ শতকের যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। ১৯৭০-এর দশকে জ্বালানির সংকট দেখা দেওয়ায় বায়ুশক্তির ব্যবহার নতুন মাত্রা পায়, এবং সেখান থেকেই বিশ্ব বায়ু দিবস উদযাপনের ধারা শুরু হয়।
এই দিবসে সবাইকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়— বায়ুশক্তিকে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ উপায়ে কাজে লাগিয়ে আমরা পরিবেশ রক্ষা ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যেতে পারি।