বিদ্যুতের আবিষ্কার: মানব সভ্যতার যুগান্তকারী বিপ্লব
বিদ্যুৎ—মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার, যা আধুনিক জীবনযাত্রাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। আজ আমরা ঘরে-বাইরে, প্রযুক্তি থেকে চিকিৎসা—প্রতিটি ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই বৈদ্যুতিক শক্তির আবিষ্কার ও বিকাশের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ গবেষণা ও বহু বিজ্ঞানীর নিরলস প্রচেষ্টা।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বিদ্যুতের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানত, তবে সেটি ছিল প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ, যেমন বজ্রপাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতকে গ্রিক দার্শনিক থেলিস প্রথম লক্ষ্য করেছিলেন যে, অ্যাম্বার পাথর ঘষলে তা হালকা বস্তু আকর্ষণ করে। এটিই ছিল স্ট্যাটিক বিদ্যুৎ বা স্থির তড়িৎ শক্তির প্রথম পরিচিতি।
এরপর ১৭৫২ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন তার বিখ্যাত ঘুড়ি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে বজ্রপাত আসলে বিদ্যুতেরই একটি রূপ। তার গবেষণা বিদ্যুতের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার পথ তৈরি করে।
তবে প্রকৃত অর্থে বিদ্যুতের ব্যবহারিক আবিষ্কার ঘটে ১৮০০ সালে, যখন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা প্রথম ব্যাটারি উদ্ভাবন করেন। তার এই ‘ভোল্টাইক পাইল’ ছিল প্রথম ধারাবাহিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস, যা পরবর্তী সময়ে আধুনিক ব্যাটারির ভিত্তি স্থাপন করে।
এরপর বিদ্যুতের ব্যবহারিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন থমাস আলভা এডিসন, যিনি ১৮৭৯ সালে প্রথম কার্যকরী বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরি করেন। তার আবিষ্কার বিদ্যুতের ব্যবহারকে বাড়িয়ে তোলে এবং আধুনিক আলোকিত শহরের ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেয়। এদিকে, নিকোলা টেসলা ও জর্জ ওয়েস্টিংহাউস বিদ্যুতের পরিবহন পদ্ধতি উন্নত করে এসি (অল্টারনেটিং কারেন্ট) প্রযুক্তি চালু করেন, যা দূরবর্তী স্থানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব করে।
আজ বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করাই কঠিন। এটি শুধু আলোর উৎস নয়, প্রযুক্তির শক্তি, শিল্পের চালিকা শক্তি এবং বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। বিদ্যুতের এই দীর্ঘ অভিযাত্রা মানব সভ্যতাকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির মাধ্যমে এর ব্যবহার আরও বিস্তৃত হবে।