বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বাজারে এক বিশাল আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে ‘এশিয়াটিক’ গ্রুপ। এই গ্রুপটির মালিকানায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ও প্রয়াত নাট্যশিল্পী আলী যাকেরের পরিবার। ৮০ শতাংশেরও বেশি বিজ্ঞাপন বাজার দখল করে এই গ্রুপটি বর্তমানে দেশের বিজ্ঞাপন জগতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বাজারে তাদের শক্তিশালী অবস্থান এবং একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে এশিয়াটিকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিতর্কও চলছে।
এশিয়াটিকের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় সমস্ত বড় বিজ্ঞাপন চুক্তি, যেখানে রয়েছে বাংলালিংক, ইউনিলিভার, কোকাকোলা, গ্রামীণফোন, রবি এবং অন্যান্য বহুজাতিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন। এ ছাড়া, সরকারি প্রকল্পের বিজ্ঞাপনগুলোর একটি বড় অংশও এই গ্রুপের হাতে চলে গেছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এডভারটাইজিং গ্রুপ হিসেবে তাদের এই শক্তিশালী অবস্থান বাজারের অন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়াটিকের একচেটিয়া ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন যে, এই গ্রুপটি তার ব্যবসার প্রসার করতে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের বিজ্ঞাপন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে এক ধরনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। অভিযোগ রয়েছে, এশিয়াটিকের মাধ্যমে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি সম্পর্কের সুবিধা নিয়েছে, যা বাংলাদেশে একটি চরম প্রভাবশালী গ্রুপ তৈরি করেছে।
এশিয়াটিকের ব্যবসায়িক প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, শুধু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপনই নয়, দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তাদের প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে, নাট্যশিল্পী আলী যাকের এবং আসাদুজ্জামান নূরের প্রভাবের কারণে এই গ্রুপটির সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাব বিস্তার করেছে। তাদের পরিবার একসময় নাটক ও টেলিভিশন শিল্পেও প্রভাব বিস্তার করেছে এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।
তবে, সম্প্রতি আলী যাকেরের মৃত্যুর পর গ্রুপটির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার মৃত্যুর পর তার পরিবার ও আসাদুজ্জামান নূর গ্রুপের শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। যদিও এখনও নতুন মালিকের নাম প্রকাশিত হয়নি, তবুও এই পরিবর্তনটি দেশের বিজ্ঞাপন বাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন শিল্পের একচেটিয়া আধিপত্যের ফলে দেশে প্রতিযোগিতার অভাব এবং বাজারের মূলধন রাস্তায় সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। অতএব, এশিয়াটিকের আধিপত্য কতদিন পর্যন্ত টিকবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বাজারে কী পরিবর্তন আসবে, তা সময়ই বলে দেবে।