বিক্ষোভকারীদের হত্যার নির্দেশ ও লাশ গুমের পরিকল্পনা করেছিলো শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো হয় অত্যাচার এবং হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা। ১৮ জুলাই রাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশের প্রধান, র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মারণক্ষম শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এর পরবর্তী দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার নির্দেশনা দেন এবং বিশেষভাবে বলেন, "বিক্ষোভের নেতাদের, দাঙ্গাবাজদের ধরুন, হত্যা করুন এবং তাদের লাশ গুম করুন।"

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (ওএইচসিএইচআর) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই মাসে ছাত্র, শ্রমিক এবং সাধারণ জনগণের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালানো হয়। এই প্রতিবেদননে জানানো হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই মিলিটারি রাইফেল ও শটগানের আঘাতে প্রাণ হারান। এই শটগানগুলো সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

এছাড়াও, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, অনেকেই স্থায়ীভাবে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেদনটি আরও জানায় যে, বাংলাদেশ পুলিশ ও এইচসিএইচআরকে ৯৫ জন আওয়ামী লীগ সদস্যের নাম জানিয়েছে, যারা বিক্ষোভের সময় সহিংসতার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। এসব অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে ১০ জন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা ও ৭ জন পুলিশ সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, পুলিশ এবং র‍্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার এবং আটক করা হয়। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু। প্রতিবেদনটি সাবেক সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস উপাদানগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ করে, যারা গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মন্তব্য করেছেন যে, সাবেক সরকারের এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল তাদের পরিকল্পিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা ধরে রাখতে পরিচালিত হয়েছিল। তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক ও নির্যাতন কৌশলের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়েছে।