ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত সপ্তাহে সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন, যেখানে তারা একাধিক আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এই বৈঠকের মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও গুরুত্ব পায়। যদিও জয়শঙ্কর বাংলাদেশের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে তারা ইউক্রেন, পশ্চিম এশিয়া এবং কমনওয়েলথ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, জয়শঙ্কর এবং ল্যামি বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। জয়শঙ্কর তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে জানান, “আমরা ইউক্রেন, বাংলাদেশ, পশ্চিম এশিয়া এবং কমনওয়েলথসহ আরও অনেক আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছি। ভারতে-যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বিশ্বের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।” তবে বাংলাদেশ নিয়ে তারা বিশেষভাবে কী আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে জয়শঙ্কর কোনো স্পষ্ট তথ্য দেননি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে, কারণ গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদচ্যুতির পর তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বিশেষজ্ঞরা এটি একটি সংকটময় পরিস্থিতি হিসেবে দেখেছিলেন, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি বড় ধাক্কা ছিল। সে সময় শোনা গিয়েছিল, শেখ হাসিনা ভারত পালালেও, তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছিলেন, তবে যুক্তরাজ্য সে সময়ে তাকে আশ্রয় দেয়নি। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তারা এই পরিস্থিতিতে কাউকে আশ্রয় দিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে ছিল না।
এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত এক আলোচিত বিষয় হচ্ছে শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কিছু বড়ো ব্যক্তি এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত ব্রিটিশ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ লেবার এমপি এবং শেখ হাসিনার ভাগ্নী। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত চলছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তাকে ব্রিটেনের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
এর মধ্যে, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অন্য এক বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে, যখন শোনা গিয়েছিল যে তিনি ২০১৯ সালে এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে দুটি ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট নিয়েছিলেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে আরও কিছু আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছিল। তার বিরুদ্ধে পদত্যাগের জন্য ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টি দাবি জানিয়েছিল।
এছাড়া, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আরো কিছু অভিযোগ উঠেছিল, যা তাকে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভা থেকে বিতর্কিত করে তোলে। তিনি সেসময় ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমানোর জন্য কাজ করছিলেন।
এছাড়া, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই মন্ত্রী যৌথভাবে বলেছেন, ভারত এবং যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বিশ্বের বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশের মধ্যে এটি স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে অবদান রাখবে।
এই বৈঠক বাংলাদেশের জন্যও বিশেষভাবে গুরুত্ব বহন করে, কারণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। ভারত এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশেরই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের মধ্যে এই ধরনের আলোচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারে।