জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলেন। তুর্ক জানান, আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনী যদি কঠোর পদক্ষেপ নিত, তাহলে তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারত।
ভলকার তুর্ক বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই-আগস্টের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের সময় আমি সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছিলাম যে, যদি সেনাবাহিনী আন্দোলন দমনের পথে যায়, তাহলে তাদের জন্য শান্তিরক্ষা মিশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।" এই সতর্কবার্তার পর বাংলাদেশে পরিবর্তন এসেছে এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকাণ্ডের সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত কৌশল ছিল। তুর্ক বলেন, "আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকাণ্ডের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে।"
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ একদলীয় শাসনের ফলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমান্বয়ে রাজনীতিকীকরণ হয়েছে, যা দেশের সমগ্র নিরাপত্তা খাতকে প্রভাবিত করেছে। নিয়োগ ও পদোন্নতিতে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো, যা নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নেতিবাচক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে।
ভলকার তুর্ক জোর দিয়ে বলেন, "বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো একটি বিস্তারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সময়ে সংঘটিত ভয়াবহ অন্যায়গুলোর সত্য উন্মোচন, নিরাময় এবং জবাবদিহিতার মুখোমুখি হওয়া, এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার প্রতিকার করা এবং এর পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনও না ঘটতে পারে তা নিশ্চিত করা।" তিনি আরও জানান, তার কার্যালয় এই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় জবাবদিহিতা এবং সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
ভলকার তুর্কের এই মন্তব্য ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকীকরণের বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে। এটি দেশের ভবিষ্যত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।