বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারিত্ব জোরদারে ইউনূসের আহ্বান: বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সহায়তা ও যুব উন্নয়নে সহযোগিতা চায় ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানের প্রতি বিনিয়োগ, মৎস্য খাত, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং যুব উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরার সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জাপান সব সময়ই বাংলাদেশের এক বিশ্বস্ত বন্ধু। সম্প্রতি আমি জাপান সফর করেছি এবং আমার প্রতিনিধিদলকে যেভাবে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।”
বৈঠকে মিয়াজাকি বাংলাদেশকে এশিয়ায় জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন এবং উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাইকা বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা দিচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “হাজার হাজার তরুণ এখন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেড়ে উঠছে কোনো আশা ছাড়াই। তারা দিন দিন হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কাঠামোর অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ি প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এটিকে “বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আমরা জাপানকে জানিয়েছি, আমরা একটি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হতে চাই।”
তরুণদের জন্য জাপানে পড়াশোনার বৃত্তি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ইউনূস বলেন, “অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে আগ্রহী। তবে ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা বড় সমস্যা। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি জাপানি শিক্ষকরা বাংলাদেশে এসে বা অনলাইনের মাধ্যমে ভাষা ও চাকরির আচরণ শেখাতে পারেন।”
নারীদের খেলাধুলায় অগ্রগতির কথা তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “আমাদের মেয়েরা সবখানেই জয়লাভ করছে। আমরা হোস্টেল সুবিধা বাড়াচ্ছি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণে সহায়তা প্রয়োজন।” জবাবে মিয়াজাকি বলেন, জাপান বিভিন্ন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে এবং নারীদের খেলাধুলায় সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
এছাড়া জাইকা বাংলাদেশকে ঘিরে একটি আইসিটি মানবসম্পদ প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করেছে, যা উভয় দেশের স্থানীয় সরকার, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হবে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য অধ্যাপক ইউনূস জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওডিএ সহায়তার সীমা ৩০০ বিলিয়ন ইয়েন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ইয়েনে উন্নীত করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় জাপানের বন্ধুত্ব ও অবদানের কথা মনে রাখবে।”