যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নতুন করে ৭৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। গত ২৭ মার্চ ২০২৫-এ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই তথ্য প্রকাশ করে। এই অর্থ বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি তাদের আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবহৃত হবে। এই সহায়তার মাধ্যমে খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও আশ্রয়ের মতো মৌলিক চাহিদা মেটানোর কথা বলা হয়েছে। এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এলো যখন বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সহায়তা কমানোর কথা বলছে ট্রাম্প প্রশাসন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন বাড়ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এই তহবিলের একটি বড় অংশ জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মাধ্যমে কক্সবাজার ও ভাসানচরের শরণার্থী শিবিরে বিতরণ করা হবে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে থেকেই এখানে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ছিল। বর্তমানে মোট ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে, আর তাই যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তাকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে।
এই অর্থায়নের ফলে ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সহায়তার পরিমাণ ২.৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ১.৯ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য ব্যয় হয়েছে। একজন কক্সবাজারের বাসিন্দা বলেন, “এই সাহায্য আমাদের জন্য আশার আলো। রোহিঙ্গারা এখানে এসেছে, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু আমাদেরও তো সীমা আছে।” তিনি যোগ করেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা না থাকলে স্থানীয়দের জীবনও কঠিন হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে শুধু মানবিক সহায়তাই নয়, বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর ইচ্ছাও প্রকাশ পেয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের উদারতা আমরা মূল্যায়ন করি। এই সংকটে আমরা তাদের পাশে আছি।” তবে এই ঘোষণার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনা শাসনের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে আছে।